জিলহজ্জের ১০ দিন : ৭ টি আমল করুন

আল আবিদ শাকির

কোরআনের বর্ণণা অনুসারে চারটি মাস পবিত্র ও সম্মানিত। আর এ মাসগুলোর অন্যতম হল জিলহজ্জ। আর ইবাদতের জন্য এ মাসের সবচেয়ে বরকতপূর্ণ ও উৎকৃষ্ট সময় হল প্রথম দশদিন। নামায, রোযা, হজ্জসহ প্রায় সকল মৌলিক ইবাদতের সমন্বয় ঘটেছে এ দশকে। কোরআন-হাদিসে এ দশকের বিশেষ ফযিলত ও তাৎপর্যের কথা বর্ণিত হয়েছে। স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা এই দশকের সম্মান ও পবিত্রতার ঘোষণা দিয়ে এ দশকের রজনীগুলোর শপথ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে: শপথ ভোরবেলার, শপথ দশ রাত্রির। – সুরা ফজর:১-২

হাদিসে পাকের মধ্যে এ দশককে দুনিয়ার সবচেয়ে উত্তম ও মর্যাদাবান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। হযরত জাবির রা. হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: দুনিয়ার সর্বোত্তম দিনগুলো হল জিলহজ্জের দশ দিন। জিজ্ঞাসা করা হল, আল্লাহর রাস্তায়ও কী তার সমতুল্য কেউ নেই? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায়ও তার সমতুল্য কেউ নেই। তবে ঐ ব্যক্তি, যার চেহারা ধূলিযুক্ত হয়েছে অর্থ্যাৎ শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করেছে। -মুসনাদে বাযযার, হাদিস নং:১১২৮

এ দশ দিনের শেষের দিকে ইসলামের অন্যতম বিধান হজ্জ পালনের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা তার কিছু সংখ্যক বান্দাকে নবজাতক শিশুর মত নিষ্পাপ বানিয়ে নেন। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ করলো এবং অশালীন কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বিরত রইল, সে নবজাতক শিশু, যাকে তার মা এ মুহুর্তে প্রসব করেছে, তার ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে ফিরবে।

হজ্জ করার সুযোগ না পাওয়া ব্যক্তিদের জন্য রয়েছে বেশ কিছু করণীয় ও বর্জনীয়। যার মাধ্যমে মুমিন বান্দা অর্জন করতে পারে বিপুল পরিমাণে সওয়াব, আল্লাহর নৈকট্য ও আখেরাতের পাথেয়। এমন কিছু বিশেষ আমলের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যেমন-

১। জিলহজ্জের চাঁদ দেখার পর থেকে কুরবানীর আগ পর্যন্ত নিজের নখ চুল, মোচ, নাভির নীচের পশম ইত্যাদি না কাটা।

আর এই আমলের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ হাজিদের সাদৃশ্য অবলম্বনকারী হবে।হযরত উম্মে সালামা রা. হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-তোমরা যদি যিলহজ্ব মাসের চাঁদ দেখতে পাও আর তোমাদের কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা করে তবে সে যেন স্বীয় চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৯৭৭

২। ঈদুল আযহার দিন ছাড়া প্রথম নয় দিন রোযা রাখা।
হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই নয়টি দিবসে (যিলহজ্ব মাসের প্রথম নয় দিন) রোযা রাখতেন।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং : ২৪৩৭

৩। যিলহজ্বের প্রথম নয় দিনের মধ্যে নবম তারিখের রোযা সর্বাধিক ফযীলতপূর্ণ।
সহীহ হাদীসে এই দিবসের রোযার ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আরাফার দিনের (নয় তারিখের) রোযার বিষয়ে আমি আল্লাহর নিকট আশাবাদী যে, তিনি এর দ্বারা বিগত এক বছর ও আগামী বছরের গুনাহ মিটিয়ে দিবেন।-সহীহ মুসলিম, হাদীস নং : ১১৬২

৪। তবে যারা হজ্জে গিয়েছেন, তাদের জন্য এদিন রোযা না রাখা উচিত।
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সা. আরাফার দিনে আরাফার ময়দানে রোযা রাখতে নিষেধ করেছেন। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৪৪২

৫। তাকবীরে তাশরীক বলা।
যিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখের ফজর থেকে তের তারিখের আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর একবার তাকবীর বলা ওয়াজিব। পুরুষের জন্য আওয়াজ করে, আর মহিলাদের জন্য নীরবে। তাকবীর হল-আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ। -ইলাউস সুনান, সালাত অধ্যায়, তাকবীরাতুত তাশরীক পরিচ্ছেদ, ৮ম খন্ড, ১৪৮ পৃষ্ঠা

৬। ঈদুল আজহার রাতে বেশি বেশি ইবাদত করা উত্তম।
বর্ণিত হয়েছে- যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার রাতে সওয়াবের নিয়তে জাগরিত থেকে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকবে, তাহলে যে দিন অন্যান্য দিল মরে যাবে সেদিন তার দিল মরবে না। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৭৮২

৭। ঈদের দিনের সবচে বড় আমল হল ঈদের নামায শেষে কুরবানী করা।
হযরত আয়শা রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন, কুরবানীর দিনে বনী আদম এমন কোন কাজ করতে পারে না, যা আল্লাহর নিকট রক্ত প্রবাহিত করা তথা কুরবানী করার চেয়ে বেশি প্রিয়। কুরবানীর পশু সকল শিং, তাদের পশম ও তাদের খুরসহ কেয়ামতের দিন [কুরবানীদাতার পাল্লায়] এসে হাজির হবে। আর কুরবানীর পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহর নিকট সম্মানের স্থানে পৌছে যায়। সুতরাং তোমরা প্রফুল্ল চিত্তে কুরবানী করবে।-সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৪৯৩

সর্বশেষ প্রখ্যাত মুফাসসিরে কুরআন ইমাম জাস্সাস রহ. এর উদৃতি দিয়ে শেষ করব। তিনি বলেন, পবিত্র কোরআনে বর্ণিত সম্মানিত চারটি মাসে ইবাদত করলে এবং গুনাহ থেকে বিরত থাকলে মহান আল্লাহ তায়ালা অন্য মাসগুলোতে ইবাদত করার ও গুনাহ থেকে বিরত থাকার সুযোগ ও সাহস দান করেন। তাই প্রত্যেক মুমিনের উচিৎ জিলহজ্জের প্রথম দশকের মত অন্যান্য বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত দিনগুলোতে ইবাদত করার।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।

[review]