মুহাররম মাসের তাৎপর্য, করনীয় ও বর্জনীয়

মুফতী হাফীজুদ্দীন

আরবী চন্দ্রবর্ষের প্রথম মাসের নাম হল মুহাররম। রাসূল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মাসকে আল্লাহর মাস বলে আখ্যায়িত করেছেন। হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “রমজানের পর আল্লাহর মাস মুহাররমের রোজা হল সর্বশ্রেষ্ঠ”।(সহীহ মুসলিম ১/৩৬৮, হাদিস নং ২৮১২, সুনানে আবু দাউদ-২৪৩১, মুসনাদে আহমদ-৮৫১৫)। পবিত্র কুরানে এ মাসকে সম্মানিত মাস বলা হয়েছে।مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ অর্থাৎ চার সম্মানিত মাসের অন্যতম এ মাস।

ইসলামের ইতিহাসে এ মাসকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। কিছু ঘটনা সহীহ (সঠিক) সূত্রে বর্নিত; আবার মওজু (জাল) অনেক ঘটনার ছড়াছড়িও সমাজে রয়েছে, যা কেবলই মনগড়া। এই মাসের সাথে সম্মপর্কিত কিছু ফযিলতসম্পন্ন নেক আমল, আবার কিছু বর্জনীয় কসংস্কারেরও প্রচলন রয়েছে। আমাদের উচিৎ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করণীয় নেক আমলফগুলো করা বর্জনীয় কুসংস্কারগুলো পরিহার করা।
  • করণীয় বিষয়ঃ
এমাসের দিনগুলোতে যতদিন সম্ভব নফল রোজা রখা। হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, আমি রাসূল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রমজান ও আশুরার রোজা যেরূপ গুরুত্বের সাথে রাখতে দেখেছি, অন্য সময় তা দেখিনি।(সহীহ বুখারী ১/২৬৮ হাদীস নং২০০৬)
অন্য একটি হাদীসে, হযরত আলী রা. বলেন রাসূল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জনৈক সাহাবী প্রশ্ন করেছিলেন যে, রমজানের পর কোন মাস আছে যাতে আপনি আমাকে রোজা রাখতে আদেশ করেন? তখন আমি তাঁর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। উত্তরে রাসূল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “রমজানের পর যদি তুমি রোজা রাখতে চাও তবে মুহররম মসে রাখ। কারণ এটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে, যে দিনে আল্লাহ তা’আলা একটি জাতির তাওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য জাতির তাওবা ককুল করবেন”।(সুনানে তিরমিজী১/১৫৭ হাদীস নং ৭৪১, মুসনাদে আহমদ- ১৩২২, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা- ৯২২৩)
আর একটি হাদীসে, অর্থঃ রাসূল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমি আশাবাদী যে, আশুরার রোজার কারনে আল্লাহ তা’আলা অতীতের এক বছরের (সগীরা) গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন”। (সহীহ মুসলিম ১/৩২৬, সুনানে আবুদাউদ ২৪২৫, সুনানে ইবনেমাজা- ১৭৩৮)
আশুরা র রোজা সম্পর্কে অন্য একটি হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা আশুরার রোজা রাখ এবং ইহুদীদের সাদৃশ্য পরিত্যাগ করে (১০ তারিখের) আগে বা পরে আরো একটি রোজা রাখ”।(মুসনাদে আহমদ-২১৫৪)
 
হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যদি আমি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে অবশ্যই ৯ তারিখেও রোজা রাখব”।(সহীহ মুসলিম ১/৩৫৯, হাদিস নং ২৭২৩, মুসনাদে আহমদ-২১০৬, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা- ১১৩৪)
মোট কথাঃ
১। মুহররম মাসে ৯ ও ১০ তারিখে অথবা ১০ ও ১১ তারিখে রোজা রাখা।
২। কৃত গুনাহের জন্য বিশেষভাবে ১০ তারিখে তাওবা করা, ক্ষমা চাওয়া ও আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করা।
  • বর্জনীয় বিষয়ঃ
এমাসে তাজিয়া বের করা, শোকগাঁথা পাঠ করা ও শোনা, কালো কাপড় পরে শোক পালন করা, মীর মোশাররফ রচিত বিষাদসিন্ধু সম্মিলিতভাবে বসে পাঠ ও ক্রন্দন করা, মিছিল ও র‌্যালি বের করা, শোক প্রকাশার্থে শরীর রক্তাক্ত করা ইত্যাদি অনৈসলামিক কার্যক্রম উল্লেখযোগ্য।
অনেকে আবার কুপ্রথা ও কুসংসকারের কারণে এ মাসকে অশুভ মনে করে বিয়ে-শাদি থেকে বিরত থাকে অথচ ‘মাসের’ কোন অশুভত্ব নেই। শুভাশুভ আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত হয়। সতরাং এ মাসের বিয়ে-শাদি করায় কোন অমঙ্গল নেই। এসবই অনৈসলামিক ধ্যানধারণা ও কুসংস্কার, এগুলো বর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যক।
  • সাবধানতাঃ
ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রিয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিধর্মীদের সভ্যতা- সাংস্কৃতি পরিহার করে একমাত্র ইসলামী সভ্যতা চালুকরা ও কুরআন হাদীস সমর্থিত আমল করা এমাসের অন্যতম শিক্ষা।
 
আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে তাউফিক দান করুক। আমীন!

আরো পড়ুন পোস্ট করেছেন

Comments

লোড হচ্ছে...
শেয়ার হয়েছে