অস্তিত্ব রক্ষায় বৃক্ষরোপণ

তিয়াসা ইদরাক

ধরুন, আপনি একজন মুসাফির, হেঁটে যাচ্ছেন এক বিস্তীর্ণ মরুভূমির মধ্যে দিয়ে। মাথার উপর গনগনে সূর্য, পায়ের নিচে মরুভূমির খরতাপ। আপনি তৃষ্ণার্ত, ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত। এ অবস্থায় মরুর বুকে কি দেখলে আপনি সবচেয়ে বেশি খুশি হবেন? নিশ্চয় মরূদ্যান। যেখানে আপনি পাবেন আপনার তৃষ্ণা মেটানোর পানি এবং রোদ থেকে আশ্রয় পাবার জন্য বৃক্ষ।

বৃক্ষ। মানবজাতির সর্বপ্রথম মিত্র। সভ্যতার সূচনালগ্নে মানুষের পাশে কেবল গাছ ছিল। বৃক্ষ মানুষকে দিয়েছে আশ্রয়, ক্ষুধার্তকে দিয়েছে ফল, ঘরবাড়ি তৈরির জন্য দিয়েছে কাঠ। কিন্তু তারচেয়েও বড় কিছু বৃক্ষ সবসময়ই দিয়ে এসেছে যা আমরা জানতে পারি অনেক পরে, বেঁচে থাকবার জন্য অক্সিজেন।

কিন্তু আমরা মানুষ বড়ই অকৃতজ্ঞ, পাপী। উপকারির মর্যাদা দিতে জানিনা আমরা। আমরা লোভী, তাই নিজেদের সভ্যতার উন্নতির স্বার্থে আমরা আমাদের হাজার বছরের মিতার প্রাণ বিসর্জন দিইয়েছি, দিইয়ে যাচ্ছি । বনবাদাড় ধ্বংস করে গড়েছি কল কারখানা, নগর। বহু প্রাণীর আশ্রয় কেড়ে নিয়েছি, অস্তিত্ব হারিয়েছে অনেকে। প্রকৃতি তার শাস্তিও আমাদের দিচ্ছে তাই। বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাচ্ছে দিনদিন, নদীগুলো  হয়ে উঠছে আরো হিংস্র!

তবে মানুষ আজ নিজেদের ভুল বুঝতে পারছে, ধীরে ধীরে। বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির মাধ্যমে ক্ষতি কমানোর চেষ্টা করছে। আর এ কর্মসূচিতে সামিল হতে পারেন আপনিও।

কেন বৃক্ষরোপন করবেন, তার উত্তর এই:

১.বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি কিংবা গ্রীন হাউজ ইফেক্ট দুটোরই মোকাবেলা করতে গাছ প্রয়োজন। গাছ পৃথিবীর কার্বনডাইঅক্সাইড এর স্বাভাবিক মাত্রা ধরে রাখতে সাহায্য করে, এবং আবহাওয়া শীতল করে এর অক্সিজেন দ্বারা। এক একর প্রাপ্তবয়স্ক গাছ আপনার গাড়ি ২৬০০০ মাইল চালালে যে পরিমাণ কার্বনডাইঅক্সাইড নিঃসৃত হয় তা শোষণ করে।
২. গাছ দুর্গন্ধ এবং দূষিত গ্যাস ( নাইট্রোজেন অক্সাইড, আ্যমোনিয়া, ওজোন ইত্যাদি) ফিল্টার করে এবং তাদের বাকল ও পাতায় আটকে রাখে।
৩. এক একর প্রাপ্তবয়স্ক বৃক্ষ একবছরে ১৮ জনের অক্সিজেনের ব্যবস্থা করে।
৪. বৃক্ষ পানিদূষন রোধ করে এবং এর মূলের সাহায্যে মাটি আটকে রাখে, ফলে নদীভাঙন হ্রাস পায়।
৫. গবেষণায় দেখা গেছে, যে যেসব অঞ্চলে গাছ বেশি তার তুলনায় যেসব অঞ্চলে গাছ কম হয় সেসব জায়গার মানুষ অপরাধপ্রবণ হয়ে থাকে। তাই বৃক্ষ মানুষের মানসিক প্রশান্তি এবং সুস্থতার জন্য আবশ্যক।

বর্তমানে বিশ্বের বহু সংঘ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করছে  সরকারি  ও বেসরকারি ভাবে। বাংলাদেশেও এমন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে, যদিও তা প্রয়োজনের তুলনায় নেহাত কম। যেখানে দেশের ভূমির ২৫% বনভূমি থাকার কথা সেখানে আছে কেবল ১৬%। তাই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে সকলের এগিয়ে আসা উচিৎ। একটি গাছ কাটলে তার বদলে দুটি লাগাতে হবে। তাছাড়া রাস্তার বুলেভার্ডে, কিংবা নদীর ধারে, বাড়ির পাশের ফাঁকা জায়গাতে সর্বত্র বৃক্ষরোপণ করা যায়।

এ আমাদের দায়িত্ব এবং অস্তিত্ব রক্ষার পথ। কারণ, বাস করবার মত একটি গ্রহ-ই তো আমাদের, তাই না?

আরো পড়ুন পোস্ট করেছেন

Comments

লোড হচ্ছে...
শেয়ার হয়েছে