ফরমালিন : ক্ষতিকর প্রভাব ও আমাদের করণীয়

ফরমালডিহাইড একধরণের রাসায়নিক যৌগ। এই উপাদানটি পানিতে মেশালে যে মিশ্রণটি তৈরি হয় সেটাকেই ফরমালিন বলা হয়ে থাকে। ফরমালিন বর্তমানে আমাদের দেশে একটি আতঙ্কের নাম। আর তার কারণ হলো কমবেশি সকল প্রকারের খাবারেই ফরমালিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়। বিশেষ করে কাঁচা মাছ এবং কিছু ফলের মধ্যে এই ফরমালিনের পরিমাণটা মাত্রাতিরিক্ত বেশি থাকে।

যে কারণে ফরমালিন ব্যবহার করা হয়

ফরমালিন মূলত খাবারের পচনরোধ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। ফরমালিন ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাককে মেরে ফেলে এবং নতুন করে ব্যাকটেরিয়ার জন্ম রোধ করে। আর তাই তাজা ফল, শাকসবজি, মাছ-মাংস বেশি সময় পর্যন্ত সতেজ রাখার জন্য এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা খাবার ক্ষতিকর এই উপাদানটি ব্যবহার করে।

স্বাস্থ্যে ফরমালিনের ক্ষতিকর প্রভাব

ফরমালিন মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর একটি উপাদান। ফরমালিনের ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান কিডনি, হার্ট, লিভার সবকিছুই নষ্ট করে ফেলে ধীরে ধীরে। বিশেষ করে ছোট শিশুদের শরীরে খুব দ্রুত ফরমালিনের প্রভাব পরে। ফরমালিনযুক্ত খাবার নিয়মিত গ্রহণে ফুসফুস কিংবা লিভারের ক্যান্সারের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে ফরমালিন চোখের রেটিনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে। আর ফরমালিনের সবচাইতে মারাত্মক প্রভাব পড়ে গর্ভবতী মায়েদের উপর। ফরমালিনযুক্ত খাবার গর্ভের সন্তানকে বিকলাঙ্গ করে দিতে পারে। অনেক সময়ে গর্ভের সন্তানের অকাল মৃত্যুর কারণ হিসেবেও ফরমালিনকেই দায়ী করা হয়ে থাকে।

তাহলে কী করণীয়?

ফরমালিনের আধিপত্য থেকে মুক্ত থাকতে চাইলে তিনটি কাজ করা যেতে পারে। জেনে নিন সেগুলো সম্পর্কে।

১. ফরমালিনযুক্ত ফল, শাক-সবজি বাজার থেকে নিয়ে আসার পর ৩০ মিনিট ভিনেগার মেশানো হালকা গরম পানিতে সেগুলো ভিজিয়ে রাখুন। এরপর ভালো করে ধুয়ে ব্যবহার করুন। আর মাছ মাংসে ফরমালিন থাকলে সেগুলো ভিনেগার কিংবা লবন মেশানো পানিতে ১ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন। এরপর ভালো করে পানি দিয়ে ধুয়ে ব্যবহার করুন। এতে ফরমালিনের আধিক্য অনেকটাই কমে যাবে।

২. আজকাল বেশ কিছু অনলাইন শপ কিংবা কিছু নির্দিষ্ট দোকানে প্রাকৃতিক বিষমুক্ত শাক-সবজি, ফল এবং মাছ -মাংস পাওয়া যায়। নির্ভেজাল এই পণ্যগুলো নিজের প্রতিদিনের খাবার তালিকায় রেখে পরিবারের সবাইকে বিষমুক্ত খাবার পরিবেশন করতে পারেন।

৩. নিজের উঠানে বা বাড়ির ছাদে নিত্য প্রয়োজনীয় শাক-সবজি-ফল চাষ, কিংবা মুরগি,কবুতর, কোয়েল পাখি ইত্যাদি লালন-পালন করতে পারেন। পুকুর না থাকলেও ছাদে বা বাড়ির উঠানে ছোট পরিসরে মাছ চাষ করতে পারেন ট্যাঙ্ক বানিয়ে। এভাবে নিজের পরিবারকে বিষমুক্ত খাবার খাওয়ানোর পাশাপাশি আপনার সময়টাও বেশ সুন্দর কাটবে। সেই সঙ্গে সবাই আপনার সৌখিনতারও প্রশংসা করবে।