ছেলের প্রতি মায়ের ঐতিহাসিক পত্র-(১)

আবু মুহাম্মাদ 

সবাইকে পড়ার জন্য বিশেষ অনুরোধ রইলো

মরহুমা সাইয়েদা খাইরুন্নেসা (রহঃ)কর্তৃক তার একমাত্র প্রিয় পুত্র আল্লামা সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী (রহঃ) কে পত্র ।

১৯২৯ কিংবা ৩০ সালে তারিখ বিহিনঃ

আলী ! দুনিয়ার হালত খুবই বিপদজ্জনক । এই সময়ে যারা আরবী লেখাপরা শিখছে তাদের ঈমান আকীদাই যখন ঠিক নাই সেখানে যারা ইংরেজি পরছে তাদের কাছে আর কিইবা আশা করা চলে ? আবদু ও তালহার মত কয়জনকে পাবে ?

আলী! লোকের বিশ্বাস যে , যারা ইংরেজী পরছে তারা বড় বড় পদমর্যদা লাভ করছে, কেউ ডেপুটি হচ্ছে, কেউ জজ, কমপক্ষে উকিল-ব্যারিস্টার তো হবেই হবে । আমি এর সম্পুর্ন বিরোধী । আমি ইংরেজী ওয়ালাদেরকে জাহিল ভাবি এবং এই লেখাপড়াকে নিস্ফল ও বেকার মনে করি । বিশেষ করে এই সময়ে জানা নাই কি হবে এবং কোন ধরনের শিক্ষা প্রয়োজন । সে সময় অবশ্য প্রয়োজন বেশী ছিলো । এই পদ মর্যদাতো একজন চামারও লাভ করতে পারে । এটা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত । এমন কে আছে যে এর থেকে বঞ্চীত ? আমাকে তো এমন কিছু হাসিল করতে হবে যা এই মুহুর্তে দুর্লভ, যা কেউ হাসিল করতে পারেনা, যা দেখের জন্য আমার চোখ উদ্গ্রীব এবং যা শোনার জন্য আমার কান অধীর । আকাংক্ষায় মন আমার ছটফট করছে কিন্তূ যা আমি দেখতে চাইছি তা চোখে পরছে না ।

আফসোস ! আমরা এমন এক সময় জন্মেছি । আলি ! তুমি কারও কথা শুনো না! যদি আল্লাহর সন্তুস্টি অর্জন করতে চাও এবং আমার হক আদায় করতে চাও তাহলে সেই সব সিংহপুরুষের দিকে তাকাও যারা ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের জন্য সারাটা জীবন ব্যায় করেছেন । তাদের সম্মান ও মর্যদা কি ছিলো ? শাহ ওয়ালীউল্লাহ সাহেব, শাহ আব্দুল আজিজ সাহেব, শাহ আব্দুল কাদের সাহেব, মওলভি মুহাম্মাদ ইব্রাহিম সাহেব, এবং তোমাদের পুর্ব পুরুষদের ভেতর খাজা আহাম্মদ ও মওলভি মুহাম্মাদ আমিন সাহেব মরহুম যাদের জীবন ও মরণ সে সময় ঈর্ষাযোগ্য ছিল ।কি রকম শান-শওকতের সংগে তারা দুনিয়াতে থেকেছেন এবং কেমন সুন্দর ভাবে তারা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন । এই সম্মান ও মর্যাদা কিভাবে লাভ করা যেতে পারে ? ইংরেজী মর্যাদাধারী তোমাদের পরিবারের সকলেই এবং আরও হবে, কিন্তু অনুরুপ মর্যদার অধিকারী কেউ নেই । এই মুহুর্তে খুব ই প্রয়োজন । তাদের ইংরেজীর প্রতি আকর্শন কিংবা প্রীতি ছিলো না । তারা ইংরেজীতে অজ্ঞ ছিলেন । তাহলে এই মর্যাদা তারা কিভাবে লাভ করেছিলেন ?

আলী! আমার একশটা সন্তান থাকলেও আমি তাদেরকে এই শিক্ষাই দিতাম । এখন কেবল তুমিই আছ । আল্লাহ তায়ালা আমার নেক নিয়তের পুরস্কার দিন যেন একশত সন্তানের গুনাবলী আমি তোমার থেকে পেতে পারি এবং এই জগতে ও পরজগতে সৌভাগ্য ও সুনামের অধিকারী হই, সন্তানের মা হিসাবে কথিত হই । আমিন! ছুম্মা আমিন! ইয়া রাব্বাল-আলামিন ।

 

আরো পড়ুন পোস্ট করেছেন

Comments

লোড হচ্ছে...
শেয়ার হয়েছে