সামাজিক দায়বদ্ধতায় কুরবানী

মোহাম্মদ আওরঙ্গজেব

মুসলিমদের দুই বড় উৎসবের মধ্যে একটি হল ঈদুল আযহা। এর অর্থ হল ত্যাগের উৎসব। প্রতিবছর মুসলিমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কুরবানী করে থাকে। কুরবানী অবশ্যই আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হওয়া চাই। লোক দেখানো কিংবা সামাজিকতার জন্য কুরবানী নয়। একজন অার্থিকভাবে স্বাবলম্বী মুসলিমের জন্য কুরবানী দেওয়া ওয়াজিব। কুরবানীর মাধ্যমে যেমন মহান রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়, তেমনি কিছু সামাজিক দায়িত্ব পালনেরও সুযোগ পাওয়া যায়।

ইংরেজীতে একটি প্রবাদ আছে- “With great power comes great responsibility.” তেমনি কালিমা বলার সাথে সাথে একজন মুসলিমের উপরও কিছু দায়িত্ব বর্তায়। কারণ আল্লাহ আমাদের মানবজাতির কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করেছেন।

সূরা আল বাক্বারাহ ১৭৭: ‌‘সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর, কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে, আত্মীয়-স্বজন, এতিম-মিসকিন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেযগার।’

আমাদের চারপাশে হয়ত এমন অনেক মানুষ আছে, যারা তাদের অভাবের কথা মুখ ফুটে বলতে পারে না; বাসার আশপাশে অনেক অভাবী মানুষ আছে, যাদেরকে সব সময় সাহায্য করা হয়ে উঠে না। আবার ব্যস্তময় জীবনে এসব সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের সুযোগও খুব একটা হয়ে উঠে না। এক্ষেত্রে কুরবানী আমাদের এসব দ্বায়িত্ব পালনের একটি সুযোগ বা ক্ষেত্র তৈরী করে দেয়।

কুরবানীর মাংস হতে গরিব-মিসকিন, প্রতিবেশী এবং আত্মীয়-স্বজনের জন্য দুই ভাগ দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে অভাবী-অসহায় মানুষদের সাথে ঈদের আনন্দ সমানভাবে ভাগ করে নেওয়া যায়। আবার স্বজনদের মাঝে অাত্মীয়তার সম্পর্ক দৃঢ় এবং মজবুত হয়।

মানুষ হিসেবে সমাজের প্রতি, সমাজের মানুষগুলোর প্রতি আমাদের অনেক দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে। কুরবানীর মাধ্যমে আমরা সে দায়িত্ব পালনে অনেকাংশে এগিয়ে যেতে পারি। কুরবানীর মাধ্যমে আমরা আমাদের আত্মকেন্দ্রিক জীবন থেকে বেরিয়ে অন্যের জন্য কিছু করার সুযোগ পেয়ে থাকি। মহান আল্লাহর কাছে আমাদের প্রার্থনা, “হে আল্লাহ! এ বছর যেন আমাদের কুরবানী আমাদের ঈমান এবং আমাদের সমাজের জন্য উপকারী হিসেবে সাব্যস্ত হয়।” আমিন।