পশু জবাইয়ে চাই চূড়ান্ত সতর্কতা

আবু নাঈম ফয়জুল্লাহ

পশু পাখি পৃথিবীর সৌন্দর্য। প্রকৃতিকে সুন্দর মনোরম বসবাসের উপযুক্ত ও প্রাণবন্ত রাখার পিছনে এদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। একটি গতিশীল সুন্দর সমাজ টিকে থাকার জন্য পশু পাখির স্বাচ্ছন্দ্য বিচরণ অত্যন্ত জরুরী। পরিচ্ছন্ন সচ্ছল জীবনের অভয়ারণ্যে জীববৈচিত্র্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এক কথায় পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে প্রাণীকূলকে বাঁচিয়ে রাখা একান্ত অপরিহার্য। পবিত্র কুরআনে তাই প্রাণী নিধনকে ফাসাদ ও মুনাফিকের আলামত হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে- “আর সে যখন প্রত্যাবর্তন করে তখন ফসল ও প্রাণী নিধন করতে করতে যমিনে বিচরণ করে। আল্লাহ ফাসাদকে পছন্দ করেন না”               [সুরা বাকারা -২০৫]।

ইসলাম একদিকে যেভাবে প্রাণীকূলের হেফাজতের প্রতি জোর তাকিদ দিয়েছে, অন্য দিকে ক্ষেত্র বিশেষ পশু জবাইয়ের অনুমতিও দিয়েছে । তবে তা একান্তই অপারগতার ক্ষেত্রে। যেমন মানুষের খাবারের প্রয়োজন মেটাতে। মহান রবের আদেশ পালনার্থে তাঁরই নামে কুরবানী করার নিমিত্তে।

ইসলামের চিরায়ত সৌন্দর্য হল- সে কখনো জীবন বাস্তবতাকে অস্বীকার করে না। আবার প্রয়োজনকে অবাধ্যতার সুযোগ দিয়ে সীমা লঙ্ঘনের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়াকেও স্বীকার করে না। প্রত্যেক কাজকে তার নিজস্ব গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ রাখতে শিখায়। পশু জবাইয়ের ক্ষেত্রেও প্রাণী হত্যার বৈধতার সুযোগ নিয়ে কেউ যেন প্রাণীকে অযথা কষ্টে ফেলতে না পারে সে জন্য ইসলাম তার অনুসারীদেরকে চূড়ান্ত সতর্কতার নির্দেশ দেয়। অসতর্কতায় যেন প্রাণীর অযথা কোন যন্ত্রণার সম্মুখীন না হতে হয় সে দিকটি সমোধিক বিবেচনায় রাখে। এ ব্যাপারে হাদিস শরীফের সুস্পষ্ট বক্তব্য- “নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা (সৃষ্টিকূলের) প্রতিটি বস্তুর উপর দয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।….. সুতরাং যখন তোমরা পশু জবাই কর তখনো সদয় হয়ে জবাই কর (সহজে প্রাণ বের হয় সে ব্যবস্থা কর)। তোমাদের প্রত্যেকেই যেন তার ছুরিকে ভাল করে ধার দিয়ে নেয় এবং তার জবাইয়ের জন্তুটিকে (অযথা কষ্ট থেকে) স্বস্তি দেয়। [আবু দাউদ, হাদিস নং-২৮১৭]

জবাইয়ের সময় ছুরি ভাল করে ধার দিয়ে নেয়ার নির্দেশ হাদিস শরীফে সুস্পষ্ট। কারণ ভোঁতা ছুরিতে পশুর মাত্রাতিরিক্ত কষ্ট ভোগ করতে হয়। কোন প্রাণীকে কষ্ট দেয়ার অধিকার অন্য প্রাণীর নেই। তাই পশুকে অযথা কষ্ট দেয়া হারাম। শুধু নাপাক রক্ত বের করে পশুকে হালাল করার জন্য যতটুকু কষ্ট না দিলেই নয়, ততটুকুর অনুমতি প্রয়োজনের খাতিরে দেয়া হয়েছে।

তাই পশুর আকৃতি বিকৃত করাও না জায়েয। কারণ এতে অসহায় প্রাণীর উপর হৃদয়হীনতা প্রকাশ পায়। “ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত- যে ব্যক্তি প্রাণীর বিকৃতি ঘটায় তার উপর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভিশাপ দিয়েছেন।”       [বুখারী, হাদিস নং-৫৫১৫]।

ঠিক একই কারণে পশুকে কোন কিছুর সাথে বেঁধে তীর মেরে হত্যা করতেও হাদিসে নিষেধ করা হয়েছে-
“হযরত আনাস রা. কয়েকজন ছেলেকে দেখলেন তারা একটি মুরগিকে বেঁধে তীর মেরে হত্যা করছে। তখন তিনি বললেন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্তুকে বেঁধে তীর নিক্ষেপ করে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন।”                              [বুখারী, হাদিস নং ৫৫১৩]।

কুরআন ও হাদীসের ভাষ্য থেকে এ বিষয়ে মোটা দাগের যে বিষয়গুলো বেরিয়ে আসে তা হল-

১. অযথা ধ্বংসের উদ্দেশ্যে প্রাণী নিধন নিষেধ।
২. প্রয়োজনে যখন প্রাণীকে জবাই করা হবে, তখনো প্রাণীকে অতিরিক্ত কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩. ছুরি ভাল করে ধার দিয়ে পশুকে ভাল মত বেঁধে সময় ক্ষেপণ না করে দ্রুত জবাই কার্য সম্পাদন করতে হবে।
৪. প্রাণ বের হওয়ার আগে চামড়া খসানো বা গোশত কাটা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে হবে।
৫. পশুকে মাত্রাতিরিক্ত কষ্ট দেয়ার সকল পন্থা বর্জনীয়।
৬. জবাইয়ের সময় ছুরির নাড়াচাড়ায় বা পশুর অঙ্গ প্রত্যঙ্গের নাড়াচাড়ায় আশপাশের মানুষদের যেন কষ্ট না হয় সে দিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

উল্লিখিত বিষয়গুলোর প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখলে একদিকে যেমন জবাইয়ের জন্তু অযথা কষ্ট থেকে রেহাই পাবে, সাথে সাথে আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সীমা লঙ্ঘন ও অবাধ্যতা থেকে বিরত থাকার মহান শিক্ষা বাস্তবায়ন করা সহজ হবে।