আমার মনে প্রশান্তি ছিল না (প্রথম পর্ব)

জুনাইদ জামশেদ

ইচ্ছা ছিল পাইলট হবেন। আকাশে উড়ে বেড়াবেন। কিন্তু সেই ইচ্ছা তাঁর পূরণ হল না। ডাক্তার আর ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সাধও মিটে গেল। কুদরতের খেলায় বিমানের স্টিয়ারিং এর জায়গায় ধরলেন গীটার। গায়ক হলেন। পপ জগতের শীর্ষে অবস্থান গ্রহণ করলেন। কিন্তু আবার কুদরতের কারিশমায় জীবন পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিলেন। একেবারেই আচমকা। চমৎকার সুন্দর অবয়বের অধিকারী এই গুনী মানুষটি একাধারে ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী আর শিল্পী। পাকিস্তানের এয়ার হিরো কর্নেল আকবর আলী জামশেদের বড় ছেলে জুনাইদ জামশেদ। সদা হাস্যোজ্জ্বল এই মানুষটি এখন অবস্থান করছেন নিজ দেশ পাকিস্তানে। তার প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড ‘জে ডট’ ও‘জাযা’ নিয়ে পুরদস্তুর ব্যস্ত এই মানুষটির সাথে অন্তর্জালিক যোগাযোগ করে জীবনধারা। বাংলায় প্রথম অনলাইন ভিত্তিক ইসলামিকলাইফস্টাইল ম্যাগাজিন জীবনধারার বিশেষ আয়োজনের জন্য এই অন্তর্জালিক সাক্ষাৎকার প্রস্তুত করেছেন এবিসি জাবের।

জীবনধারাঃ আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন?

জুনাইদ জামশেদঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ ভালো।

জীবনধারাঃ আপনার ছেলেবেলা দিয়েই শুরু করি। ছেলেবেলায় কেমন ছিলেন?
জুনাইদ জামশেদঃ আমি এমনিতে একটু চাপা স্বভাবের ছিলাম আব্বু-আম্মুর কাছে কিন্তু দুষ্টুমিও করতাম।

জীবনধারাঃ কোন মজার স্মৃতি আছে কি?
জুনাইদ জামশেদঃ একদিনের ঘটনা, আমি ও আমার ছোটভাই হুমায়ুন একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম যে, পাশের বাড়ির আমগাছ থেকে আম পাড়ব। তো আমি আর ও গেলাম। ও আমাকে বলল যে গাছ তো বেশী উঁচু না তো জুনাইদ ভাই চলেন আমরা একজন আরেকজনের কাঁধে চড়ে আম পাড়ি। আমি বললাম কে কার উপর চড়বে। ও বলল আমি চড়ব। আমি বললাম না! আমি চড়ি ও বলল ঠিক আছে আর এমনিতেই ছোটকাল থেকে আমরা লম্বাই ছিলাম। যাক,আমি ওকে বললাম যে বাড়ির মালিক অনেক খারাপ সুতরাং সাবধান থাকিস। তো আমি উঠলাম ওর কাঁধে আর ও নীচে দাঁড়িয়ে। আমি আম হাতে নিতেই বাড়ির ভেতর থেকে আওয়াজ আসল ‘বাইরে কে?’ আওয়াজ শুনে হুমায়ুন দিল দৌড় আর আমি সোজা নীচে পড়লাম।সেখানে ছিল ইট আমার মাথা গেল ফেটে তারপর বাড়ির মালিক গাড়ি দিয়ে আমাকে নিয়ে গেল হাসপাতালে। সেই থেকে আম খাওয়ার সময় মনে হয় যে, কত কষ্ট করেছিলাম আমের জন্য।

জীবনধারাঃ আপনারা কয় ভাই বোন?
জুনাইদ জামশেদঃ তিন ভাই আমি, হুমায়ুন আর উমর আর এক বোন মনিশা।

জীবনধারাঃ দ্বীনের সাথে কি ছোটবেলায় কোন সম্পর্ক ছিল?
জুনাইদ জামশেদঃ দ্বীনের সাথে সম্পর্ক বলতে আমি ছোটবেলায় এক মাওলানা সাহেবের কাছে কোরআন শিখতাম। ঐ মাওলানা সাহেবের একটা ছেলে ছিল যে আমার সাথে পড়ত। কিন্তু মাওলানা সাহেব আমাকে ক্বেরাত এর প্রতি জোর দিতেন। আমিও পড়তাম এবং আমাদের বাহিনীর বোর্ডের এক প্রতিযোগিতায় আমি তৃতীয় হয়েছিলাম। কিন্তু বিষয় হল পরিবেশের। সেখান থেকে যখন আব্বুর ট্রান্সফার হল তখন সেই মাওলানাও গেল আমার কোরআন পড়াও গেল। কিছু সুরা মুখস্ত ছাড়া আর কিছুই রইল না। তো সেখানের পরিবেশই আমাকে এই মিউজিক জগতে আনার জন্য কাজ করে।

জীবনধারাঃ পড়াশোনার কথা যদি বলেন?
জুনাইদ জামশেদঃ আব্বু বলতেন যে, দেখো! ছাত্র অবস্থায় তিনটি বিষয়ের সম্মুখীন হবে যার মধ্যে যেকোন দুইটিকে নিয়ে তুমি যদি চল তবে তুমি কামিয়াব হবে আর যদি তিনটিকে নিয়েই চল তাহলে তুমি কামিয়াব হতে পারবে না। বিষয়গুলো হল পড়াশোনা, খেলাধুলা আর আরাম-আয়েশ। তো আমি যেহেতু ছোটকাল থেকেই শারীরিকভাবে ফিট ছিলাম তাই আমি পড়াশোনা আর খেলাধুলাই বেঁছে নিলাম। এই করতে করতে মিউজিকেও চলে এলাম। গ্রাজুয়েশন করলাম তারপর ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লাম।

জীবনধারাঃ ছেলেবেলা থেকে কি হওয়ার স্বপ্ন ছিল?
জুনাইদ জামশেদঃস্বপ্ন ছিল পাইলট হওয়ার। সেটা তো হল না। এরপর ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হওয়ার তাও মিস হল তারপর ইচ্ছা ছিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার কিন্তু সেটাও হলাম না। হলাম গিয়ে মিউজিশিয়ান। আর এখন তো ব্যবসায়ী । সবই আল্লাহর কুদরত!

জীবনধারাঃ গানের শুরুটা কীভাবে?
জুনাইদ জামশেদঃ আমার বয়সে এক বছরের ছোট হুমায়ুন। ওর কণ্ঠ এত চমৎকার ছিল! বলার বাইরে। এমনকি আমারটা ওর সামনে কিছুই না। তো ও গাইত। আম্মু একবার ইংল্যান্ডে গেলেন আমি বললাম যে আসার সময় একটা গীটার নিয়ে আসতে তাহলে হুমায়ুন গাবে আর আমি গীটার বাজাব। আম্মু গীটার আনলেন আমাদের এই গানের দৌড় চলতে লাগল। কিন্তু হুমায়ুন যেহেতু আর্মিতে ছিল তাই ছুটিতে এলে ওকে নিয়ে বসতাম আর এর মাঝে গীটার চালাতে চালাতে আমি হয়ে গেলাম গায়ক। হওয়ার কথা ছিল হুমায়ুনের আর হলাম আমি।

জীবনধারাঃ পপ গানের জগতে পাকিস্তানকে পথ দেখিয়েছেন। কীভাবে আসা এই দুনিয়ায়?
জুনাইদ জামশেদঃ আমরা কলেজে ফাংশন করতাম। তো আমাদের একদিন দেখা হল পাকিস্তানের নামকরা ডিরেক্টর ও প্রযোজক শোয়াইব মানসুরের সাথে। তিনি বললেন, আরে তুমি এখানে কেন গান গাও? তোমার তো আমাদের সাথে গাওয়া দরকার। তখন আমি তো আকাশে উঠে গেলাম, এরপর তো জার্নি শুরু। মূলত তার হাত ধরেই মিউজিকে উন্নতি। তারপর চিন্তা করলাম যে পাকিস্তানের সঙ্গীতটাকে আরো উন্নত করা দরকার। তখনই আমাদের ব্যান্ড ‘ভাইটাল সাইন’ এর সূচনা করি।

জীবনধারাঃ সে সময়ে টিমে আপনারা কারা কারা ছিলেন?
জুনাইদ জামশেদঃ আমি, সালমান, নুসরাত হুসাইন, রিজওয়ান, আমির জাকি, রহিল, শেহজাদ আর শোয়েব মানসুর ভাইতো ছিলেনই। তিনি আমাদের উন্নতির পিছনে কাজ করেছেন। আমরা ভালো গাইলেও তিনি প্রশংসা না করে বলতেন এইযে, ভক্ত, টাকা আর সুনাম কেন? মিউজিকের কারণে। সুতরাং মিউজিক ছাড়া যাবেনা। এভাবে আমাদের জমিয়ে রাখতেন।

জীবনধারাঃ মিউজিকে এই বিশাল উন্নতির কারণ কি?
জুনাইদ জামশেদঃ ফোকাস। শোয়েব মানসুর আমাদেরকে একটা বিষয় শিখিয়েছেন তা হল ফোকাস। কোন কাজ একাগ্রতার সাথে করে যাওয়া। এটার কারণে আমাদের ফোকাস ছিল একমাত্র মিউজিক। কোন নাম, পয়সা আর ফ্যান ইত্যাদি নয় শুধু মিউজিক। এই ফোকাস আমার এখনও কাজে আসে। আমার দিন রাত ছিল শুধুই মিউজিক। এমনও হয়েছে যে, আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলাম এর মাঝেই আমার মাথায় একটা টিউন আসল আমি পাশের গীটার নিয়ে শুরু করে দিতাম টিউনিং। অনেক বিখ্যাত গান এভাবেই তৈরি হয়েছিল।

জীবনধারাঃ নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী কারা ছিল?
জুনাইদ জামশেদঃ আমি কখনই নিজেকে পাকিস্তানের কারো প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করিনি আমার দৃষ্টি ছিল বিশ্বব্যাপী। ১৯৯২ সালে ভ্যামলি এরিনায় একটা কনসার্টে আমি যাই। সেখানে বলিউডের অমিতাভ বচ্চন ছিলেন সিনিয়র আর্টিস্ট। এছাড়াও জুনিয়রদের মধ্যে ছিল আমির খান, সালমান খান আর জুহি চাওলা আর ‘ভাইটাল সাইনের’ শিল্পীরা। তো একসময় ডাক আসল যে অমিতাভ বচ্চন সবাইকে তার কামরায় যেতে বলেছেন। তিনি যেহেতু সিনিয়র ছিলেন প্রোগ্রাম কীভাবে করতে হবে তা বলবেন। আমি গেলাম আর দেখলাম তার কামরাটা যেন প্রাসাদ।তার উপরে বিশাল ন্যামপ্লেটে তার নাম লিখা। আমাদের তো কামরা ছিল ছোট। তো মনে মনে বললাম এমন কি হতে পারে না যে আমার নাম ওখানে থাকবে? পরক্ষনেই মনে হল যে, কোথায় আমি আর কোথায় অমিতাভ বচ্চন! কিন্তু মাত্র ৮ বছরের মাথায় আমি আবার সেখানে শো করতে গেলাম আর সেখানের ঐ কামরাটাতেই আমার নাম লিখা ছিল। এই ফোকাস-টাই সে জায়গায় আসতে সাহায্য করেছে।

জীবনধারাঃ ভাইটাল সাইন এর বিষয়টা যদি খুলে বলেন?
জুনাইদ জামশেদঃ আসলে আমাদের ব্যান্ডের সবাইকে দেশের প্রতি ভালবাসার তালিম দেয়া হয়েছিল। তো আমাদের তখন ফোকাস ছিল পাকিস্তান। আমরা দেশাত্মবোধক গান বেশী গাইতাম। এই উদ্দেশ্যেই কাজ করত ‘ভাইটাল সাইন’। বিবিসি একবার এক ইন্টার্ভিউতে আমাকে বলল যে, আপনারা হলেন পূর্বের ‘বিটল’ (পশ্চিমের নামকরা ব্যান্ড)। আমি তখন তাঁকে বলেছিলাম যে, না! কারণ, বিটল তো মানুষকে ড্রাগ আর নেশাখোর বানানোর ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে আমরা তো শুধু দেশভক্তি শিখিয়েছি। তো এই ব্যান্ড থেকেই বিখ্যাত গান ‘দিল দিল পাকিস্তান’, ‘মাওলা তেরে করম’ ইত্যাদি বের হয়েছে।

জীবনধারাঃ আচ্ছা এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি। সাধারণত আমরা দেখি যে সেলিব্রেটিদের যে অংশ দ্বীনের দিকে আসে তারা তাদের ক্যারিয়ারের শেষ অথবা নিম্নগতির সময়ে আল্লাহর দিকে ফিরে। কিন্তু আপনার ব্যাপারটা বড়ই আশ্চর্যের! কারণ, আপনি যখন মিউজিক ছাড়লেন তখন আপনার অবস্থান অনেক শীর্ষে। কেন আর কিভাবে এ পরিবর্তন?
জুনাইদ জামশেদঃ আসলে এই মিলিনিয়ামের শেষ দিকে বিবিসি একটা জরিপ করে যে, গত শতাব্দীর সবচেয়ে প্রসিদ্ধ গানগুলোর সেরা দশটি গান কোনগুলো? তো সেই লিস্টে আমার ‘দিল দিল পাকিস্তান’ তৃতীয় স্থান লাভ করে। মূলত সবচেয়ে বেশী ভোট এসেছিল আমার গানে কিন্তু যেহেতু এটা শতকের নতুন গান তাই প্রথম করেনি। কেননা, বাকি সবগুলো ছিল ফোক সঙ্গীত আর সব শিল্পী মারা গেছে একমাত্র আমিই বেঁচে ছিলাম। তো বিবিসি আমাকে ফোন দিল যে আপনার কেমন লাগছে? বিশ্বাস কর! আমার তখন কেন যেন খুশি লাগেনি। স্বাভাবিকভাবেই আমি বললাম যে, জ্বি! ভাল লাগছে। আমি নিজেকে প্রশ্ন করলাম যে আমি কেন খুশি না? অথচ আমার কাছে খুশির সব উপকরণ বিদ্যমান। এছাড়া তখন পাকিস্তানের পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হয়েছিল আর আমি ‘মাওলা তেরে করম’ এই এ্যালবামও বের করি। তো আমি এই বিষয়টা আমার বন্ধুদের শেয়ার করলাম। আমার ব্যান্ডের লোকেরা বলল যে আমাদের আরো দূর যেতে হবে। আমার শিখ, হিন্দু, খ্রিষ্টান আর মুসলমান বন্ধুদের বললাম কিন্তু সদুত্তর পেলাম না। তখন আমি মাওলানা তারিক জামিল সাহেবের সাথে মোলাকাত করলাম আর তাঁকে মনের অস্থিরতা আর অশান্তির কথা বলতেই তিনি বললেন যে, তোমার ব্যাথা এক জায়গায় আর মলম লাগাচ্ছ আরেক জায়গায় তাহলে কীভাবে রোগ ভালো হবে? মাটির দেহের খোরাক আল্লাহ মাটি হতে সৃষ্টি করেছেন আর রূহ যেহেতু আসমান থেকে আসা হুকুম তাই এর খাবারও ওখান থেকে আসতে হবে। আমি বললাম যে, রূহের খোরাক তো গান-বাজনা। তিনি বললেন যে, না! বরং রূহের খোরাক হল আল্লাহর জিকির। তো এরপর আমি সময় সময় মাওলানার সাথে মোলাকাত করতাম আর মাঝে মাঝে ফোনে কথা বলতাম। এভাবে তাবলীগে তিন দিন সময় লাগাতাম কিন্তু তখনও মিউজিক ছাড়িনি। আর মাওলানাও আমাকে মিউজিক ছাড়তে বলেননি বরং তিনি বেশী বেশী আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের কথা বলতে বলতেন।

জীবনধারাঃ তো কখন ছাড়লেন মিউজিক?
জুনাইদ জামশেদঃ আসলে মিউজিক তখন তৈরি হয় যখন অন্তরে মিউজিকের আগুন জ্বলে। কিন্তু তাবলীগে সময় লাগাতে লাগাতে আমার এই আগুন খতম হয়ে গেছিল। আমার তখন এই অঙ্গনের খারাপ দিকগুলো নজরে আসতে লাগল। যেমন, একবার আমি ষ্টেজে পারফর্ম করছি তখন সামনে থেকে একটা মেয়ে আমাকে এমন ইঙ্গিত করল যে আমি হয়রান হয়ে গেলাম যে, একটা বোন কি কখনও এমন ইঙ্গিত করতে পারে? এমন নানান ঘটনা আছে।

জীবনধারাঃ দুই একটা ঘটনা যদি শোনান?
জুনাইদ জামশেদঃ আমরা যারা শোবিজে থাকতাম তখন আমাদের মাঝে অনেক অহংকার কাজ করত। এই কারণে ভক্তরা কখন আমাদের কাছে আসতে পারত না। একদিন এক শো করার পরে আমি বসে আছি এক নওজোয়ান দৌড়ে আসল। দাঁড়ি নেই হাতে ব্রেসলেট ইত্যাদি লাগানো। এসে বলল, আমাকে আপনি গান শিখাবেন। আমি বললাম, আমি তো গান শিখাই না। সে বলল, আপনি না শিখালেও আমি শিখে নিব আমাকে আপনার মত হতে হবে। আমি বললাম, ঠিক আছে অন্য জায়গায় যেতে হবে না বল কি ব্যাপার? তখন সে বলল, আপনি জানেন? আমি হাফেজ। আমি তখন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম যে তাহলে দাঁড়ি কাটা কেন? লেবাস কই? সে বলল, ওসব দিয়ে কী হবে? আমি আপনার মত হব। আমি বললাম ,হায় এই আমাকে দেখে একজন হাফেজ রাসুলের জিন্দেগী ছাড়ছে! আমি তখন তাবলিগে যাওয়া আসা করি। তো এভাবে আমি যখন এক চিল্লা দিয়ে আসলাম। তখন আমি স্টেজে পারফর্ম করছি। আমার দশ-বিশ হাজার দর্শক ছাড়া ভালো লাগত না। একারনেই বিদেশের শো খুব বেশী ইনজয় করতাম না। তো সামনে এরকম দর্শক আর মিউজিক বাজছে। আমি তখন যেন দুনিয়াতে নেই। এক সময় আমার পেছন থেকে আওয়াজ এল যে, জুনাইদ! মিউজিক বাজছে সামনে দর্শক। আমি তখন পাশের লোকের দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে চলে এলাম যে, আমার দ্বারা হবে না। আমি মিউজিক করবোনা।

জীবনধারাঃ মিউজিক ছেড়ে দ্বীনের পথে আসার কারণে কোনো কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়েছে?
জুনাইদ জামশেদঃ আমার যেহেতু কামাইয়ের মাধ্যম এই মিউজিকই ছিল তাই অর্থনৈতিক দিক দিয়ে খুব ভেঙ্গে পড়ি। আমার ছেলেকে ব্যয়বহুল স্কুল থেকে সরিয়ে আমার সামর্থ্যের স্কুলে ভর্তি করি। গাড়ি ছিল তিনটা সেগুলো বিক্রি করি। এমন সময় এল যে বাসায় একশত টাকাও নাই। অথচ আমার ছেলের পরীক্ষার ফি দিতে হবে।

জীবনধারাঃ এমতাবস্থায় অটল থাকা কীভাবে সম্ভব হল?
জুনাইদ জামশেদঃ আল্লাহর দয়ায় আর আল্লাহ তো বলেছেনই যে আমাকে যারা ভালবাসে তাদেরকে আমি পরীক্ষা করব। যেমন, ঐ দিনই আমার কাছে পেপসির ফোন এল যে, একটা কন্ট্রাক্ট আছে চার কোটি টাকার এক বছরের জন্য । আমি তো অবাক! ঘরে একশত টাকাও নেই তাই আমি স্ত্রী আয়েশাকে বললাম যে এখনও তো টাকা নেই কন্ট্রাক্টটা নিয়ে নেই একবছর পরে তওবা করে নিব। তো আমার স্ত্রী আয়েশা বলল যে যদি এই সময়ে মওত আসে তখন কি হবে? তো আমি মানা করে দিলাম। একটু পরে আবার ফোন এল যে, ঠিক আছে একবছর দরকার নেই চার মাস চার লাখ টাকা। মালয়শিয়াতে রাখা হবে ফ্যামিলি সহ শুধু কয়েকটা মিউজিক ভিডিও রেকর্ডিং হবে। তবে দাঁড়ি কাটতে হবে আর এতে অসুবিধা নাই কারণ আমরা ফ্যামিলি সহ ওখানেই চারমাস রাখব এতে দাঁড়িও বড় হয়ে যাবে। কিন্তু আয়েশার সাথে পরামর্শ করে এটাও বাদ দিলাম আর সবর করলাম। এছাড়া সিনেমারও অফার এসেছিল শোয়েবের কাছ থেকে সেটাও আল্লাহর রহমতে রিফিউজ করেছি।

জীবনধারাঃ পরিবারের মাঝে পরিবর্তন কীভাবে হল?
জুনাইদ জামশেদঃ আসলে আমি নিজেকেই বাঁচাতে ছিলাম কাউকে আমি চাপ দেইনি। আলহামদুলিল্লাহ আমার আব্বু-আম্মু, ভাই-বোন সবাই কিছু আমার মোহাব্বতে আর কিছু আল্লাহর মোহাব্বতে জিন্দেগী পরিবর্তন করে নেয়। আর আয়েশা তো হিজাবে অভ্যস্ত ছিলনা কিন্তু আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়েছে। আমি চাপ দেইনি হয়তো দিতাম যদি আমার পিছনে কেউ না থাকত। আমি নিজেই পাঁচ বছর নিয়েছি তওবার জন্য তো অন্যের জন্য তাড়া কিসের? একদিন এমন হল যে, আমি আয়েশাকে বললাম আমাকে তো অমুক আলেম তোমাকে সহ তাদের বাসায় দাওয়াত করেছে কিন্তু ওখানে তো সবাই নেকাব পরে। তখন আয়েশা বলল যে, ঠিক আছে আমি নেকাব না পড়ি হিজাব পড়ি। আমি বললাম, ঠিক আছে। এরপর আস্তে আস্তে পরিবর্তন এসেছে।

 আমার মনে প্রশান্তি ছিল না (দ্বিতীয় পর্ব)

আরো পড়ুন পোস্ট করেছেন

Comments

লোড হচ্ছে...
শেয়ার হয়েছে