কৃপন আর ঘি… এ কি তেলেসমাতি !

লেখক: মুহাম্মাদ জামিল।

 দুই কৃপনের একবার শখ হল……… ঘি খাবে। তাও আবার খাটি ঘি এবং তা অবশ্যই হতে হবে মুফতে ! (বিনে পয়সায়)। কিন্তু খাটি ঘির তো অনেক দাম, তাও আবার সবখানে পাওয়া যায় না। যেখানে পাওয়া যায় সেখানে কি আর বিনে পয়সায় পাওয়া যায় ?? বরং খাটি ঘি এর দাম তো আকাশচুম্বী!

কিন্তু তারা পন করেছে খাটি ঘি খাবেই এবং তাও মুফতে ।কারন টাকা পয়সা যে তাদের জানের চেয়েও প্রিয়। যাই হোক ছয় মাস অনেক খড় কাঠ পুড়িয়ে একজন ঘিওয়ালাকে বের করল যিনি খাটি ঘি তৈরী করেন। এরপরে দুজন মিলে তার কাছে ঘি চাওয়ার জন্য গেল। কিন্তু ঘিওয়ালা যখন বুঝতে পারল যে তারা মুফতে ঘি চাচ্ছে তখন তিনি তাদেরকে সাফ না করে দিলেন। বললেন খাটি ঘি ফাও খাওয়ার জন্য নয়। কিন্তু তারা নাছোড়বান্দা চাইতেই থাকল, অনেক অনুনয় বিনয় করল, তাদের ঝুলিতে যত বুদ্ধি আছে প্রয়োগ করল । ঘিওয়ালা তাদেরকে সাফ জানিয়ে দিল, আমার বানান ঘি বিনে পয়সায় নয় ……… । কিন্তু তারা ঘিওয়ালার পিছু ছাড়ল না। তার দোকানে এসে বসে থাকত। হঠাৎ করে তার বাসায় হাজির হত। দীর্ঘ এক বছর তার পিছনে লেগে থাকল। দীর্ঘ এক বছর পর ঘিওয়ালা হার মানল। তিনি  দুইজনকে একশিসি করে ঘি দিতে রাজি হল এই শর্তে যে, ঘি পাওয়ার পর তারা আর কোনদিন তার সামনে আসবে না। তারা রাজি হল এবং তাদেরকে ঘি দেওয়া হল। তারা যার যার বাড়ি চলে গেল। দীর্ঘ এক বছর পর দুই কৃপনের দেখা হল। এক কৃপন আরেক কৃপনকে দেখে কেদে ফেলল। বলল বন্ধু আমি শেষ! আমার ঘি গতকালকে শেষ হয়ে গেছে। অন্য কৃপন অবাক হল, বলল আমার তো ঘি শেষ হয় নি। তুই কিভাবে খেলি যে, এতবড় হোমিওপ্যাথিকের বোতলের ঘি শেষ হল! বলল আমি একথাল গরম ভাতে একফোঁটা ঘি দিতাম আর বাষ্পে উড়া গন্ধ দিয়ে আমি তৃপ্তিসহকারে পুরো ভাত খেয়ে নিতাম। কিন্তু আপসোস! ঘি, আমার শেষ হয়ে গেল। দ্বিতীয় কৃপন বলল হা এভাবে কেউ ঘি খায় নাকি? আমার পুরো ঘি তো এখনও আছে! প্রথম কৃপন কান্না বন্ধ রেখে অবাক দৃষ্টি নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করল কিভাবে ?? দ্বিতীয় কৃপন বলল , আমি যখন ভাত খেতে বসতাম তখন গরম ভাত নিতাম, ঘি এর বোতলের মুখ খুলতাম। এরপর ……… ঘি এর বোতল থেকে গন্ধ শুকে তৃপ্তিসহকারে ভাত খেতাম। এতেকরে একদিকে আমার ঘি খাওয়াও হত অন্যদিকে ঘিএর পরিমাণ ও ঠিক থাকত। একথা শুনে প্রথম কৃপনের আপসোস আরও বেড়ে গেল। সে কান্না করতে করতে বাসার দিকে চলে গেল।

কৃপনদের ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে কঠোর ধমকি আর রাসূল(সাঃ) এই ব্যাপারে তার উম্মতকে দিয়েছেন অনেক সতর্কবানী। কৃপন দুনিয়াতে যে সমস্ত শাস্তি ভোগ করে তার মধ্যে অন্যতম দুইটি হচ্ছে, সম্পদ থাকা সত্তেও ভোগ করতে না পারা আর সম্পদ খরচ হয়ে গেলে অহেতুক আপসোস করে বাকি জীবন শেষ করা। এই গল্পে এই দুটো চিত্র দেখলাম। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দ্বীনের কাজে সাধ্যমত, নিজের এবং পরিবারের জন্য প্রয়োজনমত খরচ করার তৌফিক দান করুন। (আমিন)

আরো পড়ুন পোস্ট করেছেন

Comments

লোড হচ্ছে...
শেয়ার হয়েছে