দস্তরখান : খাবারে সভ্যতার প্রতীক

আবু নাঈম ফয়জুল্লাহ

আমাদের বাহ্যিক জীবনের প্রধান অনুষঙ্গ খাবার। প্রাণীর জীবন ধারণের জন্য এর বিকল্প নেই। দেড় হাজার বছর আগেই জীবনের অন্যান্য অনুষঙ্গের মত খাবারের ক্ষেত্রেও সভ্যতার শিক্ষা দিয়েছে ইসলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাটিতে চামড়ার দস্তরখান বিছিয়ে খাবার খেয়ে খাবারের সবচেয়ে কল্যাণকর, সুন্দর ও উপযোগী পন্থা শিক্ষা দিয়ে গেছেন বিশ্বকে। ইসলামে এটাই দস্তরখানার সুন্নত তরিকা। হযরত আনাস (রা.) বলেন, ‌‌’তিনি পায়া বিশিষ্ট বড় পাত্রেও খাবার খেতেন না। কাতাদা (রা.) কে জিজ্ঞেস করা হল, তাহলে কিসের উপর খানা খেতেন? তিনি বললেন চামড়ার দস্তরখানের উপর।’ (বুখারী- ৫৩৮৬)

  • দস্তরখান বিছিয়ে খাবার খাওয়ার অন্যতম উপকারিতা হল, খাবার নষ্ট না হওয়া। যেখানে সেখানে ফেলে ছিড়ে খাবার খাওয়া সভ্য মানুষের কাজ নয়। এতে খাবার নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। আর দস্তরখান বিছিয়ে মার্জিত ভঙ্গিতে খাবার গ্রহণ করায় একদিকে যেমন সুন্নত আদায়ের পূণ্য অর্জন হয়, অপর দিকে মার্জিত ও সভ্য জীবনের অনুশীলনটাও হয়ে যায়। কুরআনে অপচয় থেকে বেঁচে থাকার সরাসরি নির্দেশ এসেছে। খাবারের ক্ষেত্রে অপচয় থেকে বাঁচার অন্যতম মাধ্যম হলো দস্তরখান। কারণ দস্তরখান বিছানোর অন্যতম উদ্দেশ্যই হল, খাবার পড়ে গেলে তা উঠিয়ে খাওয়া।
  • মাটিতে দস্তরখান বিছিয়ে খাবার খাওয়া সরল ও নিরহংকার মানুষের স্বভাব। দস্তরখান ছাড়া খাবারে খাদ্যের প্রতি অবহেলা প্রকাশ পায়। অবহেলায় অহংকারের জন্ম হয়। অহংকারীরা কোন কিছুকে সম্মান দিতে জানে না। দস্তরখান বিছালে খাবারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন প্রকাশ পায়। এতে অহংকারের আশঙ্কা থাকে না। হাদিস থেকে স্পষ্ট যে, নবীজী (সা.) অহংকারিদের মত খাবার খেতেন না।
  • খাদ্যের পূর্ণ উপকার লাভের জন্য খাদ্যের প্রতি ভক্তি থাকা অপরিহার্য। এখানে ভক্তির সাথে শক্তির যোগসূত্র শাস্ত্রীয় ভাবে প্রমাণিত। দস্তরখানে খাবার খেলে খাদ্যের প্রতি ভক্তি ও আগ্রহ প্রকাশ পায়- এটি শত ভাগ নিশ্চিত। দস্তরখান ছাড়া খাবারে যা অনুপস্থিত। তাই দস্তরখানের সুন্নত আদায়ে পুষ্টির নিশ্চয়তাও অনায়াসেই বেড়ে যায়। তাছাড়া দস্তরখানে যেহেতু একটু নিচু হয়ে খাবার খেতে হয়, এতে পেটে চাপ থাকে। মাত্রাতিরিক্ত আহার করে দেহে মেদ তৈরীর আশঙ্কাও এতে কম থাকে।

মোটকথা দস্তরখান খাবারকে মর্যাদাপূর্ণ ও মার্জিত ভঙ্গিতে গ্রহণ করতে সাহায্য করে। বাহ্যিক তৃপ্তির সাথে সাথে আত্মিক পরিতৃপ্তি লাভেও সহায়তা করে। পবিত্রতার আবেশ জাগায় খাবরের প্রতিটি নলায়। প্রিয় নবীজীর প্রিয় সুন্নত এভাবেই আমাদেরকে সভ্যতার সবক দেয়।

আরো পড়ুন পোস্ট করেছেন

Comments

লোড হচ্ছে...
শেয়ার হয়েছে