ইন্টারনেটের নিরাপদ ব্যবহার; দরকার কিছু সতর্কতা

মোহাম্মাদ ওবায়েদুল্লাহ

ইন্টারনেট একবিংশ শতাব্দীর মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাসায় খুচরো বিনোদন বলেন আর মহাকাশে নাসার গবেষণা বলেন সবকিছুর সাথেই ইন্টারনেট ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ইন্টারনেট আপনার নিত্যদিনের সঙ্গী, প্রয়োজনের কাণ্ডারী। ইন্টারনেটকে তাই আপনি নিমেষেই সেরা বন্ধু হিসেবে আখ্যা দিতে পারেন। কিন্তু একটু দাঁড়ান। ক্ষণিকের অসতর্কতার কারণে আপনার এই বন্ধুই আপনাকে সর্বস্বান্ত করে পথে বসাতে পারে । কেমন সমস্যায় আপনি পড়তে পারেন তা দেখে নিন।

তথ্যচুরি বা তথ্য হ্যাকিং:

ইন্টারনেটের কল্যাণে চাইলেই আমরা যে কারোর সাথে তথ্য আদান প্রদান করতে পারছি নিমিষেই। কিন্তু অনলাইনে নিজেকে নিরাপদ রাখা কতোটা জরুরি? আপনার তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে আপনাকেই ভাবতে হবে। অনলাইনে নানান রকমের সাইবার অপরাধ হয়ে থাকে, আর সাইবার অপরাধীরা সর্বক্ষণ লেগে থাকে আপনার তথ্য চুরি করার জন্য। হতে পারে সেটা আপনার ইমেইল/ফেইসবুকের পাসওয়ার্ড কিবা ক্রেডিট কার্ড ডিটেইলস! এভাবে চুরি হতে পারে আপনার অফিস কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ডাটা। অথবা আপনার ব্যাংক একাউন্টের ইনফরমেশন। সাইবার অপরাধীরা আপনার কম্পিউটারে একটি ম্যালওয়্যার বা ট্রোজেন ইন্সটল করে খুব সহজেই হাতিয়ে নিতে পারে আপনার এসব সংবেদনশীল তথ্য। মনে করেন আপনি ইন্টারনেট থেকে ‘থ্রি ইডিয়টস’ মুভিটা ডাউনলোড করলেন আর মনের আনন্দে দেখলেন! কিন্তু আপনি কি জানেন, আপনার অজান্তেই ওই মুভিটির সাথে হ্যাকারের বাইন্ড করে দেয়া ম্যালওয়্যার/ ট্রোজেন আপনার কম্পিউটারে ইন্সটল হয়ে গেছে! আর হ্যাকারের হাতে চলে যাচ্ছে আপনার গুরুত্বপূর্ণ সংবেদনশীল তথ্য।

ব্যাংক একাউন্ট হ্যাকিংয়ের ক্ষেত্রে হ্যাকাররা বর্তমানে ইমেইল আর মোবাইল সিম কার্ডের ইউসও করে থাকে। বিশেষকরে যেসব ব্যাংকে মোবাইল ব্যাংকিং চালু আছে তাঁদের নিরাপত্তা ব্যাবস্থা যদি যথেষ্ট শক্ত না হয় তবে হ্যাকাররা এর সুযোগ নিতে পারে। যেমন তারা আপনার সিমটি বিভিন্ন কায়দা করে তুলে নিতে পারে কাস্টমার কেয়ার থেকে। তারপর সেই সিম নাম্বারের সাথে যদি আপনার ব্যাংক লেনদেনে ব্যবহার করা ই-মেইল টি যুক্ত থাকে তাহলে খুব সহজেই তারা সেই ই-মেইল হাতিয়ে নিয়ে যাবে। আর আপনার কষ্টার্জিত টাকা তখন তাদের হাওলায়।

নতুন App বা সফটওয়্যার ব্যবহারের ক্ষেত্রে:

নতুন করে যাদের মাথায় হ্যাকিং এর ভূত ঢুকে, তাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা না দিলেই নয়। মনে করেন কারো হ্যাকার হওয়ার খুব ইচ্ছে হলো, আর সে ইন্টারনেট থেকে অনেকগুলো হ্যাকিং-এর সফটওয়্যার ডাউনলোড করলো। কিন্তু, এসব সফটওয়্যার-ই হতে পারে সাইবার অপরাধীদের বানানো ম্যালওয়্যার, এবং সবচেয়ে বেশি এগুলোতেই থাকে।

ফ্রী ওয়াইফাই ব্যবহারের ক্ষেত্রে:

মনে করেন, একটি ফ্রী ওয়াইফাই জোন পেয়ে আপনি মনের আনন্দে ডাউনলোড করা শুরু করে দিলেন। কিন্তু আপনি জানেন কি? একই নেটওয়ার্কে বসে হ্যাকার সহজেই হাতিয়ে নিতে পারে আপনার ফোন বা কম্পিউটারের কুকি। এই কুকির মানে কিন্তু বিস্কিট না, আপনার ফোন বা কম্পিউটারের কুকি, হ্যাকার নিজের সিস্টেমে রিপ্লেইস করে, ফেসবুক, ইমেইল বা অন্যান্য পাসওয়ার্ড না জেনেই আপনার অ্যাকাউন্টসের এক্সেস নিয়ে নিতে পারে।

খুব জটিল সমস্যা মনে হচ্ছে তাই না? কিন্তু না, সামান্য কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলেই এগুলো আর কোনো সমস্যাই না। দেখে নেই আপনি কি কি সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেন ইন্টারনেট ব্যবহারকে নিরাপদ করার জন্য।

● কোন অপরিচিত সফটওয়ার ডাউনলোড করা বা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। এমনকি তা যদি আপনার বন্ধুও বলে ব্যবহার করতে (সব বন্ধু না, আপনি যাদের বিশ্বাস করেন আবার করেননা।) যদি কোন সফটওয়্যার নিত্তান্তই ডাউনলোড করা লাগে আগে তার সম্পর্কে নেটে সার্চ করে জেনে নিন।
● কোন সাইটে লগ-ইন করার সময় সাইটের এডড্রেসটা ভালোভাবে চেক করে নিন। মেইল থেকে পাওয়া লিঙ্ক দিয়ে কোথাও লগ-ইন করা থেকে বিরত থাকুন।
● আপনি যদি একজন Developer হন তাহলে আপনাকে অবশ্যই সাধারন ব্যবহারকারী থেকে আরো ভালো করে সিকিউরিটি সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে।
● পাসওয়ার্ড সব সময় ৮ ডিজিটের বেশি দিন। কী জেনারেটর সফটওয়্যারগুলোর মাধ্যমে সাধারন কম্পিউটার দিয়ে এর বেশি ডিজিটের পাসওয়ার্ড ভাংতে পারেন। যত পারেন নাম্বার দিয়ে পাসওয়ার্ড দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।আর এখন প্রায় সব সাইটেই ইউনিকোড সাপোর্ট করে, তাই যদি কোন শব্দ ব্যবহার করেন তাহলে নিজে দেশের শব্দ ব্যবহার করুন যা আপনার মনে রাখতে সহজ হয়। তাই বলে ভাববেননা যে আমি আপনাকে শব্দ ব্যবহার করতে বলছি। যত পার শব্দ ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। ইংরেজী শব্দকে সম্পূর্ন না বলুন। মাঝে Space ব্যবহার করুন।
● আর অপরিচিত সাইটে লগ-ইন করা থেকে বিরত থাকুন।
● কয়েক সপ্তাহ বা ১-২ মাস পরপর পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন। পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে ফেসবুকের “Forgot password?” অপশনটি ব্যবহার করুন।
● এমন কোন তথ্য প্রোফাইল ইনফোতে ব্যবহার করবেন না যা আপনার ইমেইল অথবা ফেসবুক একাউন্ট এর পাসওয়ার্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এসব সাইটে ব্যক্তিগত তথ্য যত কম প্রদান করবেন ততই আপনি সুরক্ষিত।
● এমন অনেক ব্যবহারকারী আছেন যারা প্রোফাইল ছবি দেখেই ফ্রেন্ড লিস্টে এড করে বসেন। কোন অপরিচিত রিকোয়েস্ট এলে তাদের ইনফো আগে যাচাই করে নিন। দেখুন তার ফ্রেন্ডলিস্টের সংখ্যা কেমন। তার অন্যান্য ইনফো সঠিক কিনা। তাছাড়া আপনাদের মাঝে কোন ফ্রেন্ড কমন আছে কিনা তাও দেখে নিন। তারপর সিদ্ধান্ত নিন। এমন কাউকে লিস্টে যুক্ত করবেন না যাদের প্রোফাইল ছবি পর্যন্ত নেই।
● এমন অনেক ফিশিং ওয়েবসাইটের সন্ধান পাওয়া গেছে যারা ব্যবহারকারীদের ভুল ইনফো দিয়ে একটি ওয়েব লিঙ্ক প্রদান করে। সাবধান! এসব লিঙ্ক এ ক্লিক করার আগে এপলিকেশনটির Terms and Condition পড়ে নিন। কোন বন্ধুও যদি আপনাকে এ ধরনের লিঙ্ক এ ক্লিক করার রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে থাকে তবে তা ফিশিং ওয়ে। সো খেয়াল রাখুন।
● সবচেয়ে বড় ব্যাপার- আপনি সতর্ক থাকুন এবং সচেতন হোন।

আরো পড়ুন পোস্ট করেছেন

Comments

লোড হচ্ছে...
শেয়ার হয়েছে