তালাক অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়: তালাক দেয়ার পরে নয়, আগেই সচেতন হোন।

লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল মাছুম।

দাম্পত্য জীবনে পা রাখার আগে আমরা অনেক বৈষয়িক প্রস্তুতি নেই্ । কিন্তু দাম্পত্য জীবন সংক্রান্ত ইসলামের বিধিবিধান জানার চেষ্টা করিনা। স্তীর হক, স্বামির হক এসব বিষয়ে চরম উদাসীন থাকি তদ্রুপ তালাকের মত গুরুতপুর্ন একটি বিধানের ব্যাপারেও সীমাহীন উদাসীন থাকি। যার ফলে অপ্রয়োজনে যততত্র তালাকের প্রয়োগ করে থাকি। অথচ শরীয়তের নীতিমালার বাইরে তালাকের প্রয়োগ আল্লাহর বিধানের সাতে বালখিল্যাতার শামিল।
তালাক এমন একটি স্পশকাতর বিষয় যা ঠাট্টাচ্ছলে দিলেও কার্যকর হয়ে যায়। তাই এব্যাপারে সতক থাকা উচিত। এজন্য যা করনীয়

‘১/ যতই মনমালিন্য হোক , ঝগড়া হোক ভুলেও তালাক বা এজাতীয় (যেমন, ছেড়ে দিলাম, সম্পর্ক ছিন্ন করলাম ইত্যাদি) শব্দ চিন্তায় ও আনবনা।মুখে আনাতো দুরের কথ।
২/ অতীব প্রয়োজনে কখনো তালাক প্রদানের প্রয়োজন হলে , একজন বিজ্ঞ মুফতি সাহেবের সরনাপন্ন হন। তিনিই বলে দিবেন তালাক দেয়ার সঠিক পদ্ধতি কী।
সংক্ষেপে তা হল,
অতীব প্রয়োজনে কখনো তালাক প্রদানের প্রয়োজন হলে শুধু সাদামাটা তালাক দিন যেমন স্ত্রীর পবিত্র অবস্থায় শুধু এক তালাক দিয়ে ক্ষান্ত হওয়া উচিত। এভাবে বলবে যে, ‘তোমাকে তালাক দিলাম।’ তালাকের সাথে ‘বায়েন’ শব্দ কিংবা ৩/২ সংখ্যা ব্যবহার করবে না। , শুধু এক তালাক। যেন উভয়ের জন্যই নতুন করে চিন্তা-ভাবনার সুযোগ থাকে এবং পুনরায় ফিরে আসার পথ খোলা থাকে। এরপর আবারো কোনো সমস্যা দেখা দিলে এভাবেই শুধু এক তালাক দিবে। এখনও ফিরে আসার পথ খোলা থাকবে। কখনো একসাথে ৩ তালাক দিবনা। এটি জগন্য অপরাধ তবে এতে ৩ তালাক কাযকর হয়ে যাবে।-একই মজলিসে পৃথক পৃথকভাবে তিন তালাক দেওয়া হোক কিংবা একই শব্দে তিন তালাক দেওয়া হোক- যেমন বলল, তোমাকে তিন তালাক দিলাম। অথবা আগে কখনো দুই তালাক দিয়েছিল আর এখন শুধু এক তালাক দিল। সর্বমোট তিন তালাক দেওয়া হল। যেকোনো উপায়ে তিন তালাক দেওয়া হলে বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে শেষ হয়ে যায়। এ অবস্থায় শুধু মৌখিকভাবে স্ত্রীকে বিবাহে ফিরিয়ে আনার যেমন কোনো সুযোগ থাকে না তেমনি নতুন করে বিবাহ দোহরানোর মাধ্যমেও ফিরিয়ে নেওয়ার পথ খোলা থাকে না।
েএ সংক্রান্ত যে ভুল প্রচলন সমাজে আছে তা হল-
১/ অনেকে মানে করে ৩ তালাক ছাড়া তালাক হয়না তাই তালাক দেয়ার সময় একসাথে ৩ তালাক দেয় । এটি ভুল।
২/ তালাক কাযকর হওয়ার জন্য সাক্ষি লাগে । এটিও ভুল সাক্ষি ছাড়াই তালাক কাযকর হয়ে যায়।
৩/ তালাক দেয়ার পর তওবা করে নিলে তালাক উড্ড হয়ে যায় । এটিও ভুল। তালাক কাযকর হয়ে গেলে তা ফিরিয়ে নেয়ার সুযোগ নেই্

৪/ রাগের অবস্থায় তালাক দিলে কি তালাক হয় নাা এটিও একটি ভূল ধারনা।
তালাক তো দেওয়াই হয় রাগ হয়ে। কয়জন আছে, শান্তভাবে তালাক দেয়? আসলে তো এমনই হওয়া উচিত ছিল যে, যদি বাস্তবসম্মত ও অনিবার্য প্রয়োজনে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হয় তাহলে বড়দের সঙ্গে পরামর্শ করে একে অন্যের কল্যাণকামী হয়ে বুঝে-শুনে, সঠিক মাসআলা জেনে নিয়ে মাসআলা অনুযায়ী তালাক প্রদানের মাধ্যমে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করবে।
কিন্তু আফসোস! অধিকাংশ মানুষ মাসআলা জানার চেষ্টাও করে না, আর না তাদের মধ্যে এই সুবুদ্ধি আছে যে, বড়দের সাথে পরামর্শ করবে, চিন্তা-ভাবনা করবে। নিজের ইচ্ছাবিরোধী কোনো কিছু পেলেই রাগের বশে তালাক দিয়ে ফেলে। আর তা এক বা দুইটি নয়; এক নিঃশ্বাসে তিন তালাক।
যখন রাগ প্রশমিত হয় তখন অনুতপ্ত হয় এবং বিভিন্ন ধরনের কথা বানাতে থাকে। বলে, আমি রাগের মাথায় বলে ফেলেছি, তালাক দেওয়ার ইচ্ছা ছিল না। এসব লোকের জেনে রাখা উচিত যে, তালাক পতিত হওয়ার জন্য নিয়তের কোনো প্রয়োজন নেই। এটা কোনো ইবাদত নয় যে, এর জন্য নিয়ত করতে হবে। নিয়ত থাক বা না থাক সর্বাবস্থায় তালাক শব্দ বলে ফেললে বা কাগজে লিখে দিলেই তালাক হয়ে যায়। তেমনিভাবে রাগের অবস্থায় তালাক দিলেও তালাক হয়ে যায়, এমনকি হাস্যরস বা ঠাট্টাচ্ছলে তালাক দিলেও তা পতিত হয়ে যায়।
অবশ্য কেউ যদি প্রচন্ড রেগে যায় ও রাগের ফলে বেহুঁশ হয়ে পড়ে আর এ অবস্থায় সে কী বলেছে তার কিছুই মনে না থাকে তাহলে ঐ অবস্থার তালাক কার্যকর হবে না।

শেষকথা এই যে, দাম্পত্য জীবন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে অনেক বড় ও বিশেষ একটি নেয়ামত। স্বামী-স্ত্রী সকলের কর্তব্য, এই নেয়ামতের যথাযথ মূল্যায়ন করা এবং একে অপরের সকল অধিকার আদায় করা। স্ত্রীর জন্য উচিত নয়, কথায় কথায় স্বামীর কাছে তালাক চাওয়া। আবার স্বামীর জন্যও জায়েয নয় আল্লাহ তাআলার দেওয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করা।
বিয়ে, তালাক ও দাম্পত্য জীবনের সকল বিধান ও মাসআলা শিক্ষা করা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের জন্য জরুরি। বিশেষ করে স্বামীর কর্তব্য হল, তালাকের মাসআলা ও এর পরিণতি সম্পর্কে অবগত না হয়ে মুখে কখনো তালাক শব্দ উচ্চারণ না করা। আর যদি কোনো কারণে তালাক দেয় এবং এমনভাবে দেয় যে, এখন আর তাদের একসাথে থাকা শরীয়তে বৈধ নয় তাহলে তাদের আল্লাহকে ভয় করা উচিত। বিভিন্ন টাল-বাহানা, অজুহাতের আশ্রয় নিয়ে কিংবা ভুল কথার উপর ভিত্তি করে অথবা মূল ঘটনা গোপন রেখে একসাথে বাস না করা উচিত। বিয়ে শুধু একটি সময়ের বিষয় নয়, সারা জীবনের বিষয়।
বাস্তবেই যদি তালাক হয়ে যায় এবং শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈবাহিক সম্পর্ক শেষ হয়ে যায় এরপরও স্বামী-স্ত্রী হিসেবে একসাথে বাস করে তাহলে তা হবে কবীরা গুনাহ এবং উভয়েই যেন ব্যভিচারের গুনাহয় লিপ্ত।
আল্লাহ তাআলা সকলকে হেফাযত করুন এবং তাকওয়া ও পবিত্রতা দান করুন। আমীন।

আরো পড়ুন পোস্ট করেছেন

Comments

লোড হচ্ছে...
শেয়ার হয়েছে