লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল মাছুম।
হিল্লা বিয়ে শব্দটি শহর-গ্রামে সর্বত্র পরিচিত। পত্রপত্রিকায়ও মাঝেমধ্যে তা চোখে পড়ে। তিন তালাক প্রাপ্তা নারীকে প্রথম স্বামীর নিকট ফিরিয়ে দেয়ার প্রচলিত অনৈসলামিক পদ্ধতি বুঝাতে শব্দটি ব্যবহার করা হয়।
ভালোভাবে জেনে নিন, হিল্লা বিয়ে বলতে শরীয়তে কিছু নেই। এ নামে সমাজে যা কিছু হচ্ছে এর সাথে ইসলামের কোন স¤পর্ক নেই। এটি একটি অনৈসলামিক, কুসংস্কার ও মূর্খতা বৈ কিছুই নয়।
তিন তালাক প্রাপ্তা নারীর ব্যাপারে কোরআন-হাদিসের মূল বিধান হলো, স্বামী স্ত্রীকে একই মজলিসে একই শব্দে তিন তালাক দিলে কিংবা পৃথক পৃথক শব্দে তিন তালাক দিলে অথবা অতীতে কখনো দুই তালাক দিয়ে বর্তমানে তৃতীয়বার তালাক প্রদান করলে- মোটকথা যে কোন উপায়ে তিন তালাক দেয়া হলে বৈবাহিক স¤পর্ক স¤পূর্ণরূপে শেষ হয়ে যায়। এ অবস্থায় শুধু মৌখিকভাবে স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার যেমন কোন সুযোগ নেই তেমনি নতুন করে বিবাহ দোহরানোর মাধ্যমেও ফিরিয়ে নেয়ার পথ খোলা থাকে না। এ পর্যায়ে প্রত্যেকে স্বাধীন। তালাকদাতা পুরুষ যেমনিভাবে অন্য কোন নারীকে বিবাহ করা না করার ব্যাপারে স্বাধীন তদ্রƒপ তালাকপ্রাপ্তা নারীও ইদ্দতের পর অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে স্বাধীন। এটি তার একান্ত এখতিয়ারাধীন বিষয়। ইদ্দত শেষে যদি স্বাভাবিকভাবে ঐ মহিলার অন্যত্র বিয়ে হয় এরপর ভবিষ্যতে সহবাসের পর দ্বিতীয় স্বামীর ইন্তেকাল হয় কিংবা ঐ স্বামী স্বেচ্ছায় তালাক দেয় এবং এতে বৈবাহিক স¤পর্ক ছিন্ন হয়ে যায় তাহলে ইন্তেকাল বা তালাকের ইদ্দত শেষ হওয়ার পর (স্বামীর ইন্তেকাল হলে স্ত্রীর ইদ্দত চার মাস দশ দিন) এই নারী আবার স্বাধীন। এ পর্যায়ে সে চাইলে পুনরায় প্রথম স্বামীর সাথে (যদি এতে তার সম্মতি থাকে) স¤পূর্ণ নতুনভাবে শরীয়ত মোতাবেক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। কোরআন মজীদের নিম্কোত আয়াতে বিষয়টি উল্লেখ হয়েছে:
“অতঃপর (স্বামী) যদি তৃতীয় তালাক দিয়ে দেয় তবে সে (তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী) তার জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত হালাল হবে না, যতোক্ষণ না সে অন্য কোন স্বামীকে বিবাহ করবে। অতঃপর যদি সে (দ্বিতীয় স্বামী) তাকে তালাক দিয়ে দেয়, তবে তাদের জন্য এতে কোন গুনাহ নেই যে, তারা (নতুন বিবাহের মাধ্যমে) পুনরায় একে অন্যের কাছে ফিরে আসবে- শর্ত হলো তাদের প্রবল ধারণা থাকতে হবে যে, এবার তারা আল্লাহর সীমা কায়েম রাখতে পারবে। এসব আল্লাহর স্থিরীকৃত সীমা, যা তিনি জ্ঞানবান লোকদের জন্য ¯পষ্টরূপে বর্ণনা করেছেন।” (-সূরা বাকারা:২৩০)
এখানে যে বিষয়গুলো লক্ষণীয় তা হলো:
১. দ্বিতীয় বিয়েটা অবশ্যই পুরোপুরি বাস্তবসম্মত ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় অন্যান্য বিয়ের মতো হতে হবে।
২. তিন তালাকপ্রাপ্তা নারীকে অন্যত্র বিয়ে বসতে বাধ্য করা যাবে না।
৩. স্ত্রীকে ছেড়ে দিতে দ্বিতীয় স্বামীকে বাধ্য করা কিংবা কোন ধরনের চাপ প্রয়োগ করা যাবে না। এক্ষেত্রে সে অন্যান্য স্বামীদের মতো স¤পূর্ণ স্বাধীন।
৪. দ্বিতীয় বিয়েটা তালাক প্রদান বা বৈবাহিক স¤পর্ক ছিন্ন করার শর্তে না হতে হবে। এমনটি করা নাজায়েয ও কবীরা গোনাহ। যারা তালাক প্রদান বা স¤পর্ক ছিন্ন করার শর্তে বিয়ে করে এবং যে শর্তারোপ করে তথা প্রথম স্বামী- উভয়ের প্রতি হাদিসে কঠোর ভর্ৎসনা ও অভিস¤পাত করা হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, যে ব্যক্তি অন্যের স্ত্রীকে তার পূর্বের স্বামীর জন্য বৈধ করার শর্তে বিয়ে করে তার প্রতি রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লানত করেছেন। অন্য বর্ণনায় আছে, আল্লাহ তায়ালা লানত করেছেন। (-সুনানে তিরমিযী: ১১২০ মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল:৮২৮৭)
৫. দ্বিতীয় স্বামীর সাথে সহবাস হতে হবে। (-দেখুন, সহীহ বুখারী: ৫২৬১)
এ হলো তিন তালাকপ্রাপ্তা নারী প্রথম স্বামীর সাথে পুনরায় দা¤পত্য জীবন গড়ার স্বাভাবিক শরীয়তসম্মত পন্থা।
এবার আপনি এর সাথে প্রচলিত হিল্লা বিয়ের চিত্রটি মিলিয়ে দেখুন। এর সাথে শরীয়তের ন্যূনতম মিলও খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর তা কীভাবেই হবে, যেখানে বিচ্ছেদের শর্তারোপ করে দ্বিতীয় বিয়ে হয়, এ বাবদ ঘুষও দেয়া হয় এবং শর্তানুযায়ী বিচ্ছেদ না করলে চাপ প্রয়োগ করা হয় ইত্যাদি। এসব স¤পূর্ণরূপে শরীয়ত পরিপন্থি কাজ। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন।
Comments