লেখকঃ আব্দুল্লাহ আল মাছুম।
রাস্তাঘাটে মাঝে-মধ্যেই চোখে পড়ে উদ্ভট অঙ্গভঙ্গি ও পোশাক পরিহিত কিছু বনি আদমকে।
তারা আমাদের সমাজে হিজড়া নামে পরিচিত।
একটি বেসরকারী পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে – ছিটিয়ে থাকা হিজড়ার সংখ্যা ৪০ হাজারের মতো। পরিপটি ২০০৪ সালের।( http://amader-kotha.com)
২০১৩ সনে রাষ্ট্রিয় ভাবে ৩য় লিঙ্গ হিসাবে তারা স্বীকৃতি পায়।
অধিকাংশ লোকই তাদেরকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখে। অবহেলা করে।
মহান আল্লাহর এই বিশাল সৃষ্টিজগতে আমাদের অনন্য পরিচয়, আমরা মানুষ। মানুষ হওয়াতেই আমরা হলাম আশরাফুল মাখলুখাত-সৃিষ্টর সেরা, বিশ্বচরাচরে মহান আল্লাহর প্রতিনিধি।
বলাবাহুল্য, এখানে মানুষ বলতে শুধু মুসলমান উদ্দেশ্য নয়, বরং আমার হিজরা ভাইটিও মানুষ। সেও মহান আল্লাহর এক অনন্য সৃষ্টি।
মানুষ হিসেবে, আল্লাহর মাখলুক হিসেবে আমরা উভয়েই সমান। আমরা উভয়েই আদম-হাওয়া পরিবারের সদস্য। একই পরিবারের দুই ভাই।
সৃষ্টিজগতে মানুষকে মানুষ হিসেবে মহান আল্লাহ যে সম্মান ও মর্যাদা দান করেছেন, তা হিজরা সম্প্রদায়ের জন্যও সমানভাবে প্রযোজ্য। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) ‘বাস্তবিকপক্ষে আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি’( -সুরা বনি ইসরাইল-৭০)
হিজরা সম্প্রদায় কি আদম-পরিবারের সন্তান নয়? এই মহাসত্য অস্বীকার করার কি কোন সুযোগ আছে?
হানাফী মাযহাবের ফিকহের কিতাবে স্পষ্ট উল্লেখ আছে-
”ان الآدمى مكرم وان كان كافراً
“মানুষ (মানুষ হিসেবে) অবশ্যই সম্মানিত। এমনকি কাফির হলেও।” (-রদ্দুল মুহতার ৫/৫৮(এইচ. এম. সাইদ কোম্পানি) )
অতএব মানুষ হিসাবে একজন হিজরাকে ঘৃণার চোখে দেখা, তুচ্ছ ভাবার কোনো অবকাশ ইসলামে নেই।
একই বাবা-মা’র ঘরে দু’ভাই কি একে অপরকে ঘৃণা করতে পারে! আদম সন্তান হিসেবে একজন মুসলিম যেমন আমার ভাই,তেমনি একজন হিজরাও আমার ভাই। আমার বোন। সে হিজড়া হওয়ার পিছনে তার কোন হাত নেই। এটি একটি রোগ। হরোমনজনিত সমস্যা।
কোন রোগীকে কি তার রোগের কারণে ঘৃণা করা যায়? হিজরা হওয়া একটি জন্মগত রোগ। এতে তাদের কোন হাত নেই।
অতএব
১.
ইসলাম ও মানবাতার দাবী অনুযায়ী তাদের প্রতি আমাদের সহানুভ’তি আচরণ করা উচিত।
২.
পর্দা ও ইসলামের সীমারেখার মধ্য থেকে তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেয়া উচিত। তারা কিভাবে নামাযী হয়ে যায় সে ফিকির করা উচিত। তারা যে মুসলিম একথাটা তাদেরকে স্বরণ করিয়ে দেয়া উচিত। একটি কথা মনে রাখা দরকার, প্রতিটি হিজড়াই একটি সুস্থ পরিবার থেকে এসেছে। কোন হিজড়া হিজড়া থেকে জন্ম নেয় না। আমাদের বাংলাদেশ মুসলিম কান্ট্রি। অতএব হিজড়া ভাই-বোনটিও মুসলিম পরিবারেরই সদস্যা।
কিন্তু অবাক কান্ড হল, অনেক হিজড়া ভাই -বোন ধারণা করে আছেন, তাদের জন্য ইসলামের কোন বিধান মানার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন নেই নামাযের। রোযার, যাকাত ইত্যাদির।
ভালবাসার মাধ্যমে তাদেরকে বিষয়টি বুঝানো উচিত।
৩.
সামর্থ্যবানদের উচিত তাদেরকে কর্মক্ষেত্রের সুযোগ দেয়া।
আর তাদের উচিত—————-
——————————–
১.
নিজে স্বাললম্বী হওয়ার চেষ্টা করা।
২.
অশ্লীলতা পরিহার করা।
৩.
স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা।
৪.
একজন পূর্ণ মুসলিম হওয়া।
তারা এসব করা সহজ হবে যদি আমরা আগে তাদের প্রতি সহানূভুতির হাত বাড়াই। আশা করি এব্যাপারে আমরা সচেত হবে॥
নিম্নের হাদীসগুলো একটু লক্ষ্য করি-
# হযরত আবু হুরাইরা রা.থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে কাউকে হেদায়াত ও সত্যের দিকে আহবান করল,এরপর তার হেদায়াত অনুযায়ী সে তার অনুসরণ করল তাহলে এতে তার যে আজর ও সওয়াব হবে সে পরিমাণ সওয়াব আহবানকারীও লাভ করবে।এতে যে ডাকে সাড়া দিয়ে আমল করেছে তার সওয়াবে কোন কমতি হবেনা। (-সহীহ মুসলিম,২৬৭৪)
# হযরত সাহল ইবনে সা’দ রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম হযরত আলী (রা.) কে বলেছেন, আল্লাহর শপথ, তোমার ওসিলায় কেউ হেদায়াত লাভ করা এটি শ্রেষ্ঠ লাল উটনির মালিক হওয়া থেকেও অনেক উত্তম। (-সহীহ বুখারী,৩৭০১)
ক্স হযরত আবু মাসউদ আনসারী রা. বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে কাউকে কল্যাণের পথ দেখাল তাহলে সেও ওই পরিমান সওয়াব লাভ করবে যে পরিমাণ সওয়াব ওই লোকের কল্যাণের পথে চলে অর্জন হবে।(-সহীহ মুসলিম,১৮৯৩)
Comments