কুরআনের তিলাওয়াত হোক নিয়মিত

কুরআনের তিলাওয়াত হোক নিয়মিত
তানজিল আমির

সূরা ফাতিরের ২৯ নং আয়াতে আল্লাহ বলছেন,‘‘যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে,নামায কায়েম করে,এবং আমি যা দিয়েছি,তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে,তারা এমন ব্যবসা করে,যাতে কখনো লোকসান হবেনা। এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা কুরআন তিলাওয়াতকে এমন ব্যবসার সঙ্গে তুলনা করেছেন যে,এ ব্যবসার কোন লোকসান নেই।কুরআন তিলাওয়াত হলো সবোর্ত্তম নফল ইবাদাত। অনেকে বলে থাকেন যে,না বুঝে পড়লে কুরআন তিলাওয়াত হবেনা। এটি মারাতœক একটি ভুল ধারনা।আমরা সবাই বিখ্যাত একটি হাদিস জানি যে, রাসূল স. বলেছেন, কুরআনের প্রতিটি হরফে একটি করে নেকি পাওয়া যায়।আর প্রতিটি নেকি দশটি নেকির সমান। রাসূল স.বলেছেন,আমি বলিনা যে,আলিফ লাম একটি হরফ।বরং প্রত্যেকটি আলাদা হরফ(তিরমিযি)। তাই কারো এমন কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে আমরা সকলে নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াতে সংকল্পবদ্ব হই।কারন কুরআন তিলাওয়াত মানে আল্লাহর সঙ্গে কথা বলা।বান্দা অন্য কোন আমলের দ্বারা আল্লাহর এতটা নিকটবর্তী হয়না,যতটা হয় নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে। আর কুরআন তিলাওয়াতের অন্যতম শর্ত হলো সহিশুদ্ব তিলাওয়াত।সাধারন যারা কুরআন পড়ে,অনেকের তিলাওয়াতই শুদ্¦ নয়।কুরআন শুদ্ব করা তেমন কঠিন বা জটিল কোন বিষয় নয়।প্রতিদিন আধাঘন্টা সময় ব্যায় করলে অল্প কয়েকদিনেই আমাদের তিলাওয়াত শুদ্ব হয়ে যাবে।অনেক মসজিদেশিশু,বয়স্ক,চাকুরিজীবি সবার সুবিধামত সময়ে আলাদা আলাদাভাবে কুরআন শিক্ষার আসর হয় । সেখানে আমরা কুরআন শিখতে পারি। বিশেষভাবে নামাজের প্রয়োজনীয় ও আমলী সূরাগুলো যেন সবার আয়ত্ব হয়ে যায়,এ ব্যাপারে আমাদের সচেষ্ট হতে হবে।কিন্তু আমার তিলাওয়াত শুদ্ব নয়,এ অজুহাতে কুরআন তিলাওয়াত ছেড়ে দেওয়ার কোন অবকাশ নেই।এক হাদিসে আছে,রাসূল স. বলেছেন,কুরআনে দক্ষ ও পন্ডিত ব্যক্তি কিয়ামতের ময়দানে পূণ্যবান ফেরেশতাদের সঙ্গে থাকবে।যে ব্যক্তি কুরআন আটকে আটকে তিলাওয়াত করে, এবং তা তার জন্য কষ্টকর হয়।তাহলে সে দুটি সাওয়াব পাবে।একটি হলো তিলাওয়াতের।।অন্যটি কষ্টের(বুখারি ও মুসলিম)।তাই অশুদ্ব হলেও তিলাওয়াত করতে হবে,পাশাপাশি শুদ্ব করার চেষ্টাও চালাতে হবে।কারন জীবনকে গতিশীল ও সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য কুরআনী নূরের কোন বিকল্প হতে পারেনা।এখনকার বাস্তবতায় আমরা যে অস্থিরতায় ভ’গছি,এ থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো কুরআনের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করা। আধুনিক প্রযুক্তি আমাদের জীবনযাত্রাকে করেছে উন্নত ও গতিশীল।প্রযুক্তির কল্যানে গোটা পৃথিবী আমাদের হাতের মুঠোয়। কুরআনের অনেক সহজ এ্যাপস রয়েছে,যেগুলোর মাধ্যমে এন্ড্যুয়েড ফোনে সহজে কুরআন পড়া যায়।আমাদের ঢাকায় যানজটে যখন আমরা অলস বসে থাকি,তখন এই এ্যাপসগুলোর মাধ্যমে কুরআন তিলাওয়াত করতে পারি। অথবা উচ্চস্বরে পড়তে যদি অসুবিধা অনুভব হয়, তাহলে কুরআনের তরজমা ও তাফসির পড়তে পাড়ি।এতে কুরআন পড়াও হলো, সময়ও কাজে লাগলো। যারা অফিসে কর্মরত তাদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সুবিধা হলো, আমরা এমন একটি রুটিন করে নেয় যে, অফিসে পৌছে আমার প্রথম কাজ হলো পনেরো বা বিশ মিনিট কুরআন তিলাওয়াত করা।অফিসের কম্পিউটারে বা মোবাইলে তো কুরআন শরীফ আছেই।তাই বাড়তি কোন সমস্যা হবেনা।এভাবে নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াতে আমার কাজে বরকত হবে,আবার ধারাবাহিকভাবে তিলাওয়াতও হবে।কারো যদি এমনটা সম্ভব না হয়,তাহলে তিনি যোহর বা আসরের নামাজের আগের সময়টুকু কাজে লাগাতে পারেন।সাধারনত প্রায় সব অফিসেই নামাজের জন্য আলাদা জায়গা রয়েছে।সামান্য চেষ্টা করলে এ সময়ে দশ বিশ মিনিট কুরআন তিলাওয়াত করা যাবে অনায়েসে।মোটকথা কুরআনের প্রতি আমাদের অনুরাগী হতে হবে।আমরা আজ কুরআন তিলাওয়াত ছেয়েই দিয়েছি।যার ফলে আমাদের সবকিছুতে এক মহাশুন্যতা বিরাজ করছে।হাদিসে আছে,যে ঘরে কুরআন পড়া হয়না,সেটি বিরান ঘরের ন্যায়।এমনিভাবে কুরআনশুন্য অন্তরও বিরান অন্তরে পরিণত হয়।এ শুন্যতা পূরনে আমাদের অবশ্যই নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াতে যতœবান হতে হবে।নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত অসাধ্য কোন কঠিন বিষয় নয়। বিশেষত এখনকার প্রযুক্তির উৎকর্ষতা বিষয়টিকে করেছে আরো সহজ।এখন বাকী শুধু আমার ইচ্ছে ও চেষ্টা।

আরো পড়ুন পোস্ট করেছেন

Comments

শেয়ার হয়েছে