উম্মে নেহলা
ছোট্ট খাদিজা। বয়স কত হবে আর। মাত্র সাত কি আট। এর মধ্যেই দ্বীনের জন্য গুছিয়ে নিয়েছে নিজেকে। তার প্রতিদিন কাটে নানা কর্মব্যস্ততায়। ঘুম ভাঙ্গতেই প্রভুর শুকরিয়া আদায়ে তার কিঞ্চিৎ দেরি হয় না। সকালে নিজের কাজে এখন আর আমার সাহায্য করতে হয় না, বরং সেই এখন আমাকে সহযোগিতা করে। আমাকে ওর বন্ধু ভাবে। সম্মান করে। দেয় অকৃত্রিম ভালোবাসা।
ছোট্ট খাদিজা এখন বড় হচ্ছে- এ বার্তা ও জানায় বিভিন্ন কাজের দ্বারা। জানায়- আমাকে এখন নিজের মত করে কিছু করতে দাও। বাস্তবতার জিঞ্জিরে ঘাত প্রতিঘাত নিয়ে আলোকিত হতে দাও। তবে এ কাজে আমায় একলা ছেড়ো না। তুমি পাশে থেকো প্রিয় বন্ধুর মত। আমি ছোট বলে দ্বীন শিক্ষায় আমাকে অবহেলা না করে গুরুত্ব দাও। এভাবে আমাকেও তোমার প্রতি গুরুত্ব বান হবার শিক্ষা দাও। আমি ওকে ছেড়ে দিয়েছি। কখনও বাঁধি না শোষণের বেড়া জালে। তবে শাসনের বেলাতেও বজ্রকণ্ঠী। ওকে আমি উড়তে বারণ করিনা, তবে উড়ার পথ বলে দেই আর পরছায়ার মত পাশে থাকি।
ওর মিষ্টি কণ্ঠে গজল শুনে টিচাররা-গার্ডিয়ানরা সবাই এক অদ্ভূত লজ্জায় পড়ে গেল। ওকে বেশ আদর করল সবাই এবং জিজ্ঞাস করল- তোমাকে কে এসব শিখিয়েছে? ওর ইশারা হঠাৎ আপদামস্তক ঢাকা একজন কালো বোরকাঅলীর দিকে। কী অপূর্ব ভালো লেগেছিল সেদিন।
একবার, ও তখন প্লেতে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে। ক্লাসের সবচাইতে চুপচাপ নম্র ভদ্র মেয়ে ও। সব টিচার ওকে একবার খুব জোর করল, গান বলার জন্য। ও খুব লজ্জা পাচ্ছিল, গান শুনানোর কথা বলাতে । তবুও সে সাহস করে গেয়ে দিল, “আল্লাহ আছেন যার, নেই কোন ভয় তার”। সব টিচাররা শুনছিল মুগ্ধ হয়ে আর মাথা নত করে ছিল। যেখানে তারা মুসলিম হয়েও বাচ্চাদের নাচ গানে উৎসাহিত করছিল, সেখানেও মেয়েটি গলা ছেড়ে গাইছে আল্লাহর কথা! তার রহমত ও সাহায্যের কথা! ওর স্কুলটা ছিল হিন্দুদের দ্বারা পরিচালিত ও প্রতিষ্ঠিত। আর অল্প সংখ্যক মুসলিম টিচার। বড় আপু সেখানকার টিচার, পারিবারিক সুবিধা অসুবিধার জন্য ওকে সেখানে শত অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাখতে হয়েছিল।
ওর মিষ্টি কণ্ঠে গজল শুনে টিচাররা-গার্ডিয়ানরা সবাই এক অদ্ভূত লজ্জায় পড়ে গেল। ওকে বেশ আদর করল সবাই এবং জিজ্ঞাস করল- তোমাকে কে এসব শিখিয়েছে? ওর ইশারা হঠাৎ আপদামস্তক ঢাকা একজন কালো বোরকাঅলীর দিকে। কী অপূর্ব ভালো লেগেছিল সেদিন। যার প্রকাশ হৃদয় গভীরে খাতাহীন পাতায় আজও সজীব হয়ে আছে । আমার প্রতিটা কষ্ট, মেহনতকে মনে হচ্ছিল কামিয়াবি। এ অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন কিছু শিক্ষা দিল। সেদিন মনে হয়েছিল আমাদের এ পরিবেশেও যাওয়া উচিত, যদি নিজেদের আমলে ঘাটতি না হয়। এটা ঈমানী দায়িত্ব। আলেমাদেরও প্রতিটা মুসলিমের এ হকের প্রতি নজর দেয়া উচিত। তবে অবশ্যই নিজেকে ক্ষতিগ্রস্থ না করে। যেটুকু সম্ভব ঠিক সেটুকুই করতে হবে। আমরাই মুসলিম জাতির সঠিক দিশা দিতে পারি। যদি নিজেরা সঠিক ভাবে তা মানতে পারি। কাউকে বলে কিছু করানোর চাইতে উত্তম পন্থা হচ্ছে- সে কাজের প্রতি নিজের ব্যক্তিত্ব, আচার-আচারণ, চলা-ফেরা, কথাবার্তা, স্নেহ-ভালোবাসা, শ্রদ্ধা-সম্মান এবং নিজের আমল দ্বারা তাকে অনুপ্রাণিত করা। এতে অতি দ্রুত কাজ হাসিল করা সম্ভব। সেটা তার মাঝে অন্যান্য কাজেও প্রেরণা জোগাবে।
কিন্ত আফসোস! আজ আমরা প্রত্যেকেই বলার প্রতি ঝুঁকে পড়েছি কয়েকশ গুন বেশি। যা কোনো কালেই আমাদের জন্য কল্যাণকর হতে পারে না। তাই আগে আমাদের বড়দের বুঝতে হবে। দায়িত্ব তো প্রথমে আমাদের নিতে হবে। তবেই না আগামী প্রজন্ম সত্যিকারের মুসলিম হতে পারবে। ভালো মানুষ হতে পারবে। পারবে সামনের আগন্তুকদের দায়িত্ব নিতে।
Comments