প্যারেন্টিং : সন্তান পালনের আধুনিক কার্যকরি উপায়

সাকিবা আহম্মদ

প্যারেন্টিং কি:
প্যারেন্টিং হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সন্তান জন্মের পর থেকে তার অগ্রগতির প্রতি সজাগ থাকা হয় এবং তার মানসিক, শারীরিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ইত্যাদি দিক দিয়ে তাকে সাহায্য ও সহযোগিতা করা হয়। আমাদের দেশে এতোদিন প্যারেন্টিং বিষয়ে খুব একটা আলোচনা না হলেও বর্তমানে অভিভাবকদের সচেতনতায় এই বিষয়টি দ্রুত প্রচার ও প্রসার লাভ করছে।

প্যারেন্টিং কেন দরকার:
বর্তমান জেনেরেশান এবং অভিভাবকদের ক্ষেত্রে একটি ব্যাপার লক্ষণীয়, আজকাল বাচ্চাদের ডিজিটাল ভাবে বেড়ে ওঠা। বাবা মায়ের ব্যস্ততাসহ নানাবিধ কারনে বাচ্চারা এখন প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে বেড়ে উঠছে। যা তাদের মানসিক ভারসাম্যকে মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বাচ্চাদের লেখা, পড়া, খেলা, খাওয়া সব কিছুই প্রযুক্তি কেন্দ্রিক হয়ে যাওয়ায় তাদের থেকে সৃজনশীলতা হারিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছেলে মেয়েদের অবাধ চলাফেরা এবং বিশৃঙ্খল জীবন যাপন নিয়ে অনেক অভিভাবককেই শঙ্কিত হতে দেখা যায়। তবে দেখা যায় না তাদের ভেতর পরিবর্তনের কোন পরিকল্পনা!

তাছাড়া বাবা মায়েদের প্রচলিত চিন্তা ধারাও অনেক ক্ষেত্রে বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করছে। সব বাবা মাই তো তাদের সন্তানকে ভালবাসেন। সন্তানের ক্ষতি কেউই চাননা। তবে ভুলে যান, সন্তান প্রতিপালনও যে শিক্ষনীয় এবং অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারন সন্তানের সঠিক প্রতিপালনের সাথে তাদের ইহকাল এবং পরকালও জড়িত। ভাল প্যারেন্টিং বলতে আসলে বুঝায়, বাচ্চার প্রতিটি পদক্ষেপ সজাগভাবে পর্যবেক্ষন এবং তার সব রকম উন্নতির জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা। আমাদের দেশে বেশিরভাগ বাবা মায়েদের দেখা যায় যে, নির্দিষ্ট কোনো বিষয় নিয়ে সন্তানদের সাথে ছোট থেকেই লেগে থাকেন। কেউ চান পরীক্ষায় ১০০ তে ১০০, সে জন্য হাজার হাজার টাকার শিক্ষক রাখছেন। নিয়ে যাচ্ছেন ৩/৪ টা নামি দামি কোচিং এ। অথচ কখনো চিন্তা করছেন না, এর ফলে বাচ্চাটার মানসিক এবং শারীরিক কী কী ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে! পাশের বাসার বাবু এ+ পেয়েছে তুই কেন পেলি না? মাইর! আশ্চর্য! উনারা কিন্তু আসলেই চিন্তিত সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে। কিন্তু ভুলে যাচ্ছেন সন্তানের বর্তমান কে।

আবার কেউ আছেন সন্তানের বদনাম করতে ভারি অভিজ্ঞ। যেমন, আরে ভাবি! আমার ছেলে একটা গাধা কিছুই মাথায় ঢুকে না। এতো টাকা ঢালছি ওর পেছনে ৪০ এর উপর নাম্বারই তুলতে পারে না। সারাদিন খায় আর ঘুমায়। একটা অপদার্থ। আপনি আশা করছেন এই সন্তান আপনাকে ভালোবাসবে?! শুধু এসবই নয় বর্তমানে অনেকেই খোলামেলা ভাবে সন্তানের সামনে অনৈতিক কাজ কর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু আশা করছেন তাদের সন্তান এগুলো করবে না! আচ্ছা তারা কী অন্ধ? সন্তান প্রতিপালনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ‘তারা যা দেখবে তাই শিখবে’। কাজেই কেন আপনার সন্তান তার সহপাঠিকে গালাগালি করলো, ধরে মারলো এই প্রশ্ন আগে নিজেকে করুন।

বর্তমান যুগে এসে যখন ছেলে মেয়েরা খুব অল্প বয়সেই অবাধ্য হয়ে যাচ্ছে, তখন আপনি কী ভাবছেন মেরে বকেই বাচ্চাকে মানুষ করে ফেলতে পারবেন? ভাবনাটি তবে সঠিক নয়। আমাদের কে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে সন্তান প্রতিপালনে অবদান রাখতে হবে। সময় এর সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে এমন ভাবনা নিয়ে বসে থাকলেও সেটা সময়ের অপচয় ছাড়া আর কোন ফলই আনবে না।

প্যারেন্টিং বিষয়ে কিভাবে প্রশিক্ষণ নিবেন:
প্যারেন্টিং বিষয়ে আপনাকে অবশ্যই প্রশিক্ষন নিতে হবে। প্যারেন্টিং একটি শিক্ষনীয় বিষয়ই বটে। সন্তান জন্মদানের পর থেকে আপনাকে সেই সন্তানের কথা ভেবেই প্যারেন্টিং সম্পর্কে বিস্তারিত পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে। এই বয়সে পড়াশোনা? কোন ব্যাপার না! প্যারেন্টিং নিয়ে বর্তমানে অনলাইনে প্রচুর ওয়েবসাইট আছে, ভাল ভাল লেকচার আছে এবং অনেক বইও পাওয়া যাচ্ছে বাজারে।

তবে এর চেয়েও জরুরি বিষয় হল, আমাদেরকে সীরাহ অর্থাৎ নাবী রাসূলদের জীবনী পড়তে হবে। আমাদের রাসূল (সা) কিভাবে বাচ্চাদেরকে ডিল করতেন বিভিন্ন হাদিসের মাধ্যমে সেগুলো উঠে এসেছে। সেগুলো থেকে শিক্ষা নেওয়াটা খুবই জরুরি। এছাড়াও সুরা লুকমান-এ আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে সন্তান প্রতিপালনের বেসিক কিন্তু জানিয়েই দিয়েছেন। সেগুলো টার্গেট করে আমাদেরকে প্ল্যান সাজিয়ে নিতে হবে। সন্তান এবং নিজের জন্য করনীয়-বর্জনীয় এর একটি লিস্ট তৈরি করে ফেললে অনেক বিষয়ই সহজ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

 

আরো পড়ুন পোস্ট করেছেন

Comments

লোড হচ্ছে...
শেয়ার হয়েছে