ঈমান সবার আগে… পর্বঃ ৪

অবজ্ঞা ও বিদ্রূপ বিরাগবিদ্বেষের চেয়েও হীন ও ভয়াবহ

ভদ্রতা ও মানবতার ছিটেফোঁটাও যার মধ্যে আছে তার কোনো ব্যক্তি, ধর্ম বা মতবাদের প্রতি বিদ্বেষ থাকলেও কখনো সে হীনতা ও অশ্লীলতায়  নেমে আসতে পারে না। তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, অবজ্ঞা-বিদ্রূপ এবং কটূক্তি ও গালিগালাজের মতো নীচ কর্মে অবতীর্ণ হতে পারে না। কারণ এটা বিদ্বেষ ও শত্রুতা প্রকাশের চরম হীন উপায়। শরাফতের লেশমাত্র আছে এমন কেউ তা অবলম্বন করতে পারে না। যেহেতু ইসলামই একমাত্র সত্য ধর্ম তাই দুষ্কৃতিকারী ও ভ্রান্ত মতে বিশ্বাসীই এর শত্রু। এদের অতিমাত্রায় উগ্র ও কট্টর শ্রেণীটি তাচ্ছিল্য, বিদ্রূপ ও অশ্লীল বাক্যের দ্বারা এই শত্রুতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে থাকে। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, সকল যুগের উগ্র কাফির-মুশরিকের প্রবণতা এটাই ছিল। এদের যে শ্রেণীটি এ অসভ্যতাকে মুনাফিকীর আবরনে আবৃত রাখার চেষ্টা করেছে তারাও এতে সফল হতে পারেনি।

এদের সাথে মুসলিম জনগণের আচরণ কী হবে এবং রাষ্ট্রপক্ষের আচরণ কী হবে তা আলাদা আলোচনা। এখানে যে কথাটি বলতে চাই, তা এতই স্পষ্ট যে, বলারও প্রয়োজন ছিল না, কিন্তু আমরা এমন এক পরিবেশে বাস করি, মনে হয়, এই সুস্পষ্ট কথাটিও অনেকেরই জানা নেই বা উপলব্ধিতে নেই।

তা এই যে, ইসলাম, ইসলামের নবী (কিংবা ইসলামের কোনো নিদর্শন সম্পর্কে কটূক্তিকারী, আল্লাহর ও তাঁর রাসূল কিংবা তার কোনো বিধানের অবজ্ঞা ও বিদ্রূপকারী যদি মুসলিমপরিবারের সন্তান হয়, মুখে কালিমা পাঠকারীও হয় তবুও সে কাফির ও মুসলমানের দুশমন। শরীয়তের পরিভাষায় এই প্রকারের কাফিরের নাম ‘মুনাফিক’, ‘মুলহিদ’ ও যিনদীক। এই স্পষ্ট বিধান এখন এজন্যই বলতে হচ্ছে যে, আমাদের সমাজে এমন লোকদের কুফরী কর্মকান্ড থেকেও বারাআত (সম্পর্কহীনতা) প্রকাশ নিজের ঈমান রক্ষার জন্য অপরিহার্য মনে করা হয় না; বরং  এদের সাথেও মুসলমানদের মতো আচরণ করা হয়, এদের প্রশংসা করা হয়, এদেরকে ‘জাতীয় বীরে’ পরিণত করার চেষ্টা করা হয়।

কুরআন মজীদ পাঠ করুন এবং স্বয়ং আল্লাহ তাআলার নিকট থেকেই শুনুন, ইসলাম ইসলামের নিদর্শনের সাথে মুসলমানের সম্পর্ক কেমন হয় আর কাফির-মুনাফিকের আচরণ কেমন হয়। এরপর ফয়সালা করুন, আপনি কাদের সাথে থাকবেন। কুরআন কারীমে আরো দেখুন, যারা ইসলামের সাথে, ইসলামের নবীর সাথে ও ইসলামের নিদর্শনসমূহের সাথে বিদ্রূপ করে, আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুসলমানদের কষ্ট দেয় তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার ফয়সালা কী।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الَّذِينَ اتَّخَذُوا دِينَكُمْ هُزُوًا وَلَعِبًا مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَالْكُفَّارَ أَوْلِيَاءَ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَl  وَإِذَا نَادَيْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ اتَّخَذُوهَا هُزُوًا وَلَعِبًا ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لَا يَعْقِلُونَ

হে মুমিনগণ! তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে যারা তোমাদের দ্বীনকে হাসি-তামাশা ও ক্রীড়ার বস্ত্তরূপে গ্রহণ করে তাদেরকে ও কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না এবং যদি তোমরা মুমিন হও তবে আল্লাহকে ভয় কর। * তোমরা যখন সালাতের জন্য আহবান কর তখন তারা ওটাকে হাসি-তামাশা ও ক্রীড়ার বস্ত্ত্রূপে গ্রহণ করে। এটা এই জন্য যে, তারা এমন এক সম্প্রদায় যাদের বোধশক্তি নেই।-আল মাইদা  ৫ : ৫৭-৫৮

বোঝা গেল, নামাযের অবজ্ঞাকারী ও নামায থেকে বাধাদানকারী ঐ যুগেও ছিল, কিন্তু মুসলমানদের জন্য আল্লাহ তাআলার বিধান, তোমরা কখনো তাদের কথায় কর্ণপাত করো না; বরং আল্লাহকেই সিজদা করতে থাক এবং তাঁর নৈকট্য অর্জন করতে থাক।

كَلَّا لَا تُطِعْهُ وَاسْجُدْ وَاقْتَرِبْ

সাবধান! তুমি ওর অনুসরণ করো না, এবং সিজদা কর ও আমার নিকটবর্তী হও।-আল আলাক ৯৬ : ১৯

আশ্চর্যের বিষয় এই যে, গাইরুল্লাহর সিজদায় এদের কোনো গাত্রদাহ নেই আর এতেও কোনো ক্ষোভ ও যন্ত্রণা নেই যে, এদের অন্তর (যা আল্লাহ তাআলারই মাখলুক) সর্বদা তাদের মিথ্যা উপাস্যদের, যেমন প্রবৃত্তি, কুফরী মতবাদসমূহ ও নিজেদের নেতা ও সর্দারদের) প্রতি সিজদাবনত। বিচার বুদ্ধির সঠিক ব্যবহার করলে এদের মনেও গায়রুল্লাহর সিজদায় ঘৃণা ও ক্ষোভ জাগত এবং তারা তা বর্জন করত। অতপর হৃদয় ও ললাট উভয়ের দ্বারাই নিজের  মতো সৃষ্টির পরিবর্তে আপন স্রষ্টার সামনে সিজদাবনত হত। বান্দার জন্য তার প্রকৃত মাবুদের সামনে সিজদাবনত হওয়াই তো পরম সৌভাগ্য।

দুনিয়াতে যে সিজদা থেকে বিমুখ থাকে কিংবা তার অবজ্ঞা ও বিদ্রূপ করে, আখিরাতে শত চেষ্টা করেও সে সিজদার সুযোগ পাবে না।

يَوْمَ يُكْشَفُ عَنْ سَاقٍ وَيُدْعَوْنَ إِلَى السُّجُودِ فَلَا يَسْتَطِيعُونَ l خَاشِعَةً أَبْصَارُهُمْ تَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌ وَقَدْ كَانُوا يُدْعَوْنَ إِلَى السُّجُودِ وَهُمْ سَالِمُونَ

স্মরণ কর, সেই দিনের কথা যেদিন ‘সাক’ উন্মোচিত করা হবে, সেই দিন তাদেরকে আহবান করা হবে সিজদা করার জন্য, কিন্তু তারা সক্ষম হবে না। * তাদের দৃষ্টি অবনত, হীনতা তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে। অথচ যখন তারা নিরাপদ ছিল তখন তো তাদেরকে অহবান করা হয়েছিল সিজদা করতে।-আল কলম ৬৮ : ৪২-৪৩

মুনাফিকরা একদিকে কুরআন, ইসলাম ও ইসলামের নবীর প্রতি অবজ্ঞা ও বিদ্রূপ করে অন্যদিকে মুসলমানদের থেকে তা গোপন করারও চেষ্টা করে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তা প্রকাশ করেই  দেন।

يَحْذَرُ الْمُنَافِقُونَ أَنْ تُنَزَّلَ عَلَيْهِمْ سُورَةٌ تُنَبِّئُهُمْ بِمَا فِي قُلُوبِهِمْ قُلِ اسْتَهْزِئُوا إِنَّ اللَّهَ مُخْرِجٌ مَا تَحْذَرُونَ l وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ لَيَقُولُنَّ إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ وَنَلْعَبُ قُلْ أَبِاللَّهِ وَآَيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنْتُمْ تَسْتَهْزِئُونَ l لَا تَعْتَذِرُوا قَدْ كَفَرْتُمْ بَعْدَ إِيمَانِكُمْ إِنْ نَعْفُ عَنْ طَائِفَةٍ مِنْكُمْ نُعَذِّبْ طَائِفَةً بِأَنَّهُمْ كَانُوا مُجْرِمِينَ

মুনাফিকরা ভয় করে, তাদের সম্পর্কে এমন এক সূরা না অবতীর্ণ হয়, যা তাদের অন্তরের কথা ব্যক্ত করে দিবে। বল, বিদ্রূপ করতে থাক; তোমরা যা ভয় কর আল্লাহ তা প্রকাশ করে দেবেন। * এবং তুমি তাদেরকে প্রশ্ন করলে তারা নিশ্চয়ই বলবে, ‘আমরা তো আলাপ-আলোচনা  ও ক্রীড়া-কৌতুক করছিলাম।’ বল, তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর আয়াত ও তাঁর রাসূলকে বিদ্রূপ করছ। * তোমরা অযুহাত দেখিও না। তোমরা ঈমানের পর কুফরী করেছ। তোমাদের মধ্যে কোনো দলকে ক্ষমা করলেও অন্যদলকে শাস্তি দেব, কারণ তারা অপরাধী।-আত তাওবা ৯ : ৬৪-৬৬

অর্থাৎ অবজ্ঞা ও বিদ্রূপ করে এই অজুহাত দাড় করানো যে, আমরা এমনি একটু ঠাট্টা করছিলাম কিংবা আমরা তো শুধু একসাথে বসে ছিলাম, মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।

এই আয়াত থেকে আরো জানা গেল, মুনাফিক যদিও ঈমানহীন, কিন্তু ভাষায় বা ভাবে যেহেতু ঈমানের দাবিদার তাই তার কুফরী কথাবার্তা বা কুফরী আচরণ ‘কুফর বা’দাল ঈমান’ (ঈমানের পরে কুফর) তথা ইরতিদাদ হিসেবে গণ্য। তার বিধান হবে মুরতাদের বিধান।

আর  এই যে বলা হয়েছে, মুনাফিকদের কাউকে কাউকে আল্লাহ তাআলা মাফ করেন, এর অর্থ, দুনিয়ার শাস্তি স্থগিত করা যে, দেখা যাক কুফর ও ঈসলামবিদ্বেষে কতদূর সে যেতে পারে। আখিরাতের শাস্তি থেকে এদের কারোরই মুক্তির কোনো উপায় নেই।

وَعَدَ اللَّهُ الْمُنَافِقِينَ وَالْمُنَافِقَاتِ وَالْكُفَّارَ نَارَ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا هِيَ حَسْبُهُمْ وَلَعَنَهُمُ اللَّهُ وَلَهُمْ عَذَابٌ مُقِيمٌ

মুনাফিক নর, মুনাফিক নারী ও কাফেরদেরকে আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জাহান্নামের অগ্নির, যেখানে তারা স্থায়ী হবে, এটাই তাদের জন্য যথেষ্ট এবং আল্লাহ তাদেরকে লা’নত করেছেন আর তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী শাস্তি।-আত তাওবা ৯ : ৬৮

إِنَّ الْمُنَافِقِينَ فِي الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّارِ وَلَنْ تَجِدَ لَهُمْ نَصِيرًا

বরং মুনাফিকগণ তো জাহান্নামের নিমণতম স্তরে থাকবে এবং তাদের জন্য তুমি কখনো কোনো সহায় পাবে না।-আন নিসা ৪ : ১৪৫

অবজ্ঞা ও বিদ্রূপ কেন, এর চেয়েও অনেক কম কষ্টদায়ক বিষয়ও কঠিন আযাবের কারণ। আর সেটাও বৈশিষ্ট্য মুনাফিকদেরই।

وَمِنْهُمُ الَّذِينَ يُؤْذُونَ النَّبِيَّ وَيَقُولُونَ هُوَ أُذُنٌ قُلْ أُذُنُ خَيْرٍ لَكُمْ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَيُؤْمِنُ لِلْمُؤْمِنِينَ وَرَحْمَةٌ لِلَّذِينَ آَمَنُوا مِنْكُمْ وَالَّذِينَ يُؤْذُونَ رَسُولَ اللَّهِ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ l يَحْلِفُونَ بِاللَّهِ لَكُمْ لِيُرْضُوكُمْ وَاللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَقُّ أَنْ يُرْضُوهُ إِنْ كَانُوا مُؤْمِنِينَ l أَلَمْ يَعْلَمُوا أَنَّهُ مَنْ يُحَادِدِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَأَنَّ لَهُ نَارَ جَهَنَّمَ خَالِدًا فِيهَا ذَلِكَ الْخِزْيُ الْعَظِيمُ

এবং তাদের মধ্যে এমনও লোক আছে, যারা নবীকে কষ্ট দেয় এবং বলে, ‘সে তো কান-পাতলা। বল, তার কান তোমাদের জন্য যা মঙ্গল তা-ই শোনে। তিনি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনেন এবং মুমিনদেরকে বিশ্বাস করেন; তোমাদের মধ্যে যারা মুমিন তিনি তাদের জন্য রহমত এবং যারা আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয় তাদের জন্য  আছে মর্মন্তুদ শাস্তি। * তারা তোমাদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য তোমাদের নিকট আল্লাহর শপথ করে। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এরই অধিক হকদার যে, ওরা তাদেরকেই সন্তুষ্ট করে যদি ওরা মুমিন হয়। * ওরা কি জানে না যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে তার জন্য তো আছে জাহান্নামের অগ্নি, যে স্থানে সে স্থায়ী হবে। সেটাই চরম লাঞ্ছনা।-আত তাওবা ৯ : ৬১-৬৩

মুনাফিকদের কাছে আল্লাহর দ্বীন, আল্লাহর ইবাদত ও  আল্লাহর আহকাম অতি অপছন্দনীয়

الْأَعْرَابُ أَشَدُّ كُفْرًا وَنِفَاقًا وَأَجْدَرُ أَلَّا يَعْلَمُوا حُدُودَ مَا أَنْزَلَ اللَّهُ عَلَى رَسُولِهِ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ l وَمِنَ الْأَعْرَابِ مَنْ يَتَّخِذُ مَا يُنْفِقُ مَغْرَمًا وَيَتَرَبَّصُ بِكُمُ الدَّوَائِرَ عَلَيْهِمْ دَائِرَةُ السَّوْءِ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ l وَمِنَ الْأَعْرَابِ مَنْ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ وَيَتَّخِذُ مَا يُنْفِقُ قُرُبَاتٍ عِنْدَ اللَّهِ وَصَلَوَاتِ الرَّسُولِ أَلَا إِنَّهَا قُرْبَةٌ لَهُمْ سَيُدْخِلُهُمُ اللَّهُ فِي رَحْمَتِهِ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ

কুফরী ও কপটতায় মরুবাসীগণ কঠোরতর; এবং আল্লাহ তাঁর রাসূলের প্রতি যা অবতীর্ণ করেছেন, তার সীমারেখা সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার যোগ্যতা এদের অধিক। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। *মরুবাসীদের কেউ কেউ, যা তারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে তা অর্থদন্ড বলে গণ্য করে এবং তোমাদের ভাগ্যবিপর্যয়ের প্রতীক্ষা করে। মন্দ ভাগ্যচক্র ওদের হোক। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। মরুবাসীদের কেউ কেউ আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে এবং যা ব্যয় করে তাকে আল্লাহর সান্নিধ্য ও রাসূলের দুআ লাভের উপায় মনে করে। বাস্তবিকই ওটা তাদের জন্য আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের উপায়; আল্লাহ তাদেরকে নিজ রহমতে দাখিল করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।-আত তাওবা ৯ : ৯৭-৯৯

নামাযও তাদের কাছে অপছন্দনীয়। এরপরও মুনাফিকী গোপন রাখার জন্য কখনো কখনো লোকদেখানো নামায পড়ে।

مُذَبْذَبِينَ بَيْنَ ذَلِكَ لَا إِلَى هَؤُلَاءِ وَلَا إِلَى هَؤُلَاءِ وَمَنْ يُضْلِلِ اللَّهُ فَلَنْ تَجِدَ لَهُ سَبِيلًا

দোটানায় দোদুল্যমান, না এদের দিকে, না ওদের দিকে এবং আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তুমি তার জন্য কখনো কোনো পথ পাবে না।-আন নিসা  ৪ : ১৪৩

আল্লাহর নাযিলকৃত কিতাব এবং তার প্রদত্ত শরীয়ত অপছন্দ করা কুফরী। যে এই কুফরীতে লিপ্ত ব্যক্তিদের কিছুমাত্র সমর্থন করবে  সে মুরতাদ।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِنْ تَنْصُرُوا اللَّهَ يَنْصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ l وَالَّذِينَ كَفَرُوا فَتَعْسًا لَهُمْ وَأَضَلَّ أَعْمَالَهُمْ

হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করবেন এবং তোমাদের অবস্থান দৃঢ় করবেন। * যারা কুফরী করে তাদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ এবং তিনি তাদের কর্ম ব্যর্থ করে দিবেন।-মুহাম্মাদ  ৪৭ : ৭-৮

আরো ইরশাদ হয়েছে-

إِنَّ الَّذِينَ ارْتَدُّوا عَلَى أَدْبَارِهِمْ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْهُدَى الشَّيْطَانُ سَوَّلَ لَهُمْ وَأَمْلَى لَهُمْ l ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا لِلَّذِينَ كَرِهُوا مَا نَزَّلَ اللَّهُ سَنُطِيعُكُمْ فِي بَعْضِ الْأَمْرِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ إِسْرَارَهُمْ l فَكَيْفَ إِذَا تَوَفَّتْهُمُ الْمَلَائِكَةُ يَضْرِبُونَ وُجُوهَهُمْ وَأَدْبَارَهُمْ l ذَلِكَ بِأَنَّهُمُ اتَّبَعُوا مَا أَسْخَطَ اللَّهَ وَكَرِهُوا رِضْوَانَهُ فَأَحْبَطَ أَعْمَالَهُمْ

যারা নিজেদের নিকট সৎপথ ব্যক্ত হওয়ার পর তা পরিত্যাগ করে শয়তান তাদের কাজকে শোভন করে দেখায় এবং তাদেরকে মিথ্যা আশা দেখায়। * এটা এইজন্য যে, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেন, তা যারা অপছন্দ করে তাদেরকে ওরা বলে, ‘আমরা কোনো কোনো বিষয়ে তোমাদের আনুগত্য করব’’ আল্লাহ ওদের গোপন অভিসন্ধি অবগত আছেন। * ফিরিশতারা যখন  ওদের মুখমন্ডলে ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করতে করতে প্রাণ হরণ করবে, তখন ওদের দশা কেমন হবে! *এটা এইজন্য যে, ওরা তার অনুসরণ করে,যা আল্লাহর অসন্তোষ জন্মায় এবং তাঁর সন্তুষ্টি অপ্রিয় গণ্য করে। তাই তিনি এদের কর্ম নিষ্ফল করে দেন।-সূরা মুহাম্মাদ ৪৭ : ২৫-২৮

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এটুকু বেয়াদবীও আল্লাহ তাআলা বরদাশত করেন না যে, কথা বলার সময় তাঁর স্বরের চেয়ে স্বর উঁচু করবে। ইরশাদ হয়েছে যে, শুধু এই অশিষ্ট আচরণের কারণে সকল আমল ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تُقَدِّمُوا بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ l يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَرْفَعُوا أَصْوَاتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِيِّ وَلَا تَجْهَرُوا لَهُ بِالْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ أَنْ تَحْبَطَ أَعْمَالُكُمْ وَأَنْتُمْ لَا تَشْعُرُونَ l إِنَّ الَّذِينَ يَغُضُّونَ أَصْوَاتَهُمْ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ أُولَئِكَ الَّذِينَ امْتَحَنَ اللَّهُ قُلُوبَهُمْ لِلتَّقْوَى لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ عَظِيمٌ

হে মুমিনগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সমক্ষে তোমরা কোনো বিষয়ে অগ্রণী হয়ো না এবং আল্লাহকে ভয় কর; আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। * হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর কণ্ঠস্বরের উপর নিজেদের কণ্ঠস্বর উঁচু করো না। এবং নিজেদের মধ্যে যেভাবে উচ্চস্বরে কথা বল তাঁর সাথে সেই রূপ উচ্চস্বরে কথা বলো না, কারণ এতে তোমাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে তোমাদের অজ্ঞাতসারে। * যারা আল্লাহর রাসূলের সম্মুখে নিজেদের কণ্ঠস্বর নীচু করে, আল্লাহ তাদের অন্তরকে তাকওয়ার জন্য পরীক্ষা করে নিয়েছেন। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহা পুরস্কার।-আল হুজুরাত ৪৯ : ১-৩

মোটকথা, ইসলাম, ইসলামের নবী ও ইসলামের নিদর্শন ও ইসলামের বিধানসমূহের প্রতি ভালোবাসা ও ভক্তি-শ্রদ্ধা ঈমানের অপরিহার্য অংশ, যা ছাড়া ঈমান কল্পনাও করা যায় না।আর এইসব বিষয়কে অবজ্ঞা, বিদ্রূপ করা, বিদ্বেষ পোষণ করা, এমনকি অপ্রীতিকর মনে করাও কুফরী ও মুনাফিকী। এই মানসিকতা পোষণকারীদের ঈমান-ইসলামের সাথে বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই।

চলবে ইনশা-আল্লাহ…………..

আরো পড়ুন পোস্ট করেছেন

Comments

লোড হচ্ছে...
শেয়ার হয়েছে