নাজাশী মসজিদ, ইথিওপিয়ার নেগাস।

এই মসজিদের নাম নাজাশী মসজিদ, এটি ইথিওপিয়ার নেগাসে অবস্থিত। বর্তমান এই ছোট শহরে সম্রাট (নাজাশী)র সাথে শেষ নিদ্রায় আছেন রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর কিছু সাহাবীও। ১৪০০ বছর আগে এখানে ছিল আকসুম নামক আবিসিনিয়ার (বর্তমান ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়া) সাম্রাজ্যের রাজধানী। সম্রাটের উপাধি ছিল নাজাশী বা নেগাস এবং তার নাম ছিল আসহামা।
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর ইসলাম প্রচারের প্রথম দিকের ঘটনা। মক্কার মূর্তিপুজারীরা তখন এক সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস ও মূর্তিপুজার বিরুদ্ধে মতবাদ প্রচারের কারণে মুসলিমদের নিয়মিত নিগ্রহ, অত্যাচার, লুট ও হত্যা করছে। প্রথম বছর দশেক মুসলিমদের তখন প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধেরও অনুমতি দেয়া হয় নি। সংখ্যায়ও ছিলেন কম, তাই তারা মুখ বুজে সহ্য করতেন। অত্যাচার চরমে উঠলে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) তার সাথীদের মক্কা ছেড়ে আবিসিনিয়ায় আশ্রয় নিতে বলেন।
নিজের দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও যাওয়া তখন এখনকার মত মুখের কথা ছিল না। কারণ আইন-শৃঙ্খলাবিহীন আরব সমাজে প্রতিরক্ষা ছিল আত্নীয় স্বজন এবং গোত্রের লোক। যাত্রাপথও বিপদসংকুল। নিজের দেশ ছেড়ে যাওয়া মানে মারা পড়া বা দাস হিসেবে বিক্রি হয়ে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা। তবু অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে কিছু মুসলিম মধ্যপ্রাচ্য ছেড়ে পাড়ি জমালেন আফ্রিকার আবিসিনিয়ায়। প্রথম দফায় ১৭ জন ও ফিরে এসে পরের বার ৮০ বা ততোধিক সাহাবী যান সেখানে।

তাদের বিশ্বাসের কথা শুনে ও নিজের ধর্মের সাথে যোগসূত্র পেয়ে তাদের আশ্রয় দেন খ্রিষ্টান নাজাশী (সম্রাট) আসহামা। এমনকি মক্কার মূর্তিপুজারীরা মুসলিমদের ফিরিয়ে নিয়ে যেতে লোক পাঠালেও তাদের নিয়ে যেতে দেন নি সম্রাট। সেখানে মুসলিমরা ছিলেন ৮ বছরেরও কিছু বেশি, মদিনায় মুসলিম রাষ্ট্র পুরোপুরি প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত। পুরো সময় তারা নিরাপদে নির্ভয়ে নিজের ধর্ম পালন করেন। কিছু সাহাবী সেখানেই শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। আসহামা নিজেও ইসলাম গ্রহণ করেন। কিন্তু তার মৃত্যুকালে কোন মুসলিম সেখানে ছিলেন না, তারা সবাই তখন চলে গিয়েছেন মদিনায়। তাই স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (ﷺ) সাহাবীদের নিয়ে মদিনায় আসহামার গায়েবানা জানাজা পড়েন।
মুসলিমদের চরম বিপদে এগিয়ে এসেছিলেন ইথিওপিয়ার খ্রিষ্টান সম্রাট। নিজে পরে মুসলিম হলেও তার জাতি রয়ে যায় খ্রিষ্টান। ইথিওপিয়া আজও একটি খ্রিষ্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। আইসিস নামক নিজেদের মুসলিম দাবী করা এক দলের কিছু লোক আজ লিবিয়াতে ইথিওপিয়ার কিছু খ্রিষ্টান নাগরিককে গুলি করে ও জবাই করে হত্যা করেছে। আল্লাহ তুমি এই মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কর। আমীন।

আরো পড়ুন পোস্ট করেছেন

Comments

লোড হচ্ছে...
শেয়ার হয়েছে