লেখক: নুরুল আলম
এম.এ.(ইসলামী অর্থনীতি)
মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
মদিনা মুনাওয়ারা
আল্লাহ তা’লা বলেন:-
وابتغ فيما أتاك الله الدار الآخرة ولا تنس نصيبك من الدنيا وأحسن كما أحسن الله إليك ولا تبغ الفساد في الأرض.
“আল্লাহ তা’লা তোমাকে যে সম্পদ দান করেছে তার মাধ্যমে আখেরাতকে তালাশ কর।তবে তোমার জন্য নির্ধারিত দুনিয়ার অংশ ভুলে যেওনা।আল্লাহ পাক তোমাকে সম্পদ দিয়ে যেভাবে অনুগ্রহ করেছেন তুমিও তেমনি মানুষের প্রতি দয়া কর।দুনিয়াতে বিবাদ সৃষ্টি কর না”।
উক্ত আয়াতে সম্পদশালীর জন্য চারটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক নীতিমালা রয়েছে।যা মেনে চললে একজন ধনী বা শিল্পপতির অর্থনৈতিক সব কাজ দ্বীনে পরিণত হবে।এবং তার হাশর হবে নবী,সত্যবাদী ও শহীদদের সাথে।নিম্নে নীতিমালা গুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হল।
এক:
সম্পদ আল্লাহর দান।এতে লাগামহীন স্বাধীনতা নেই।এটি আখেরাত অর্জনের অন্যতম মাধ্যম।নিজ প্রচেষ্টায় সম্পদ অর্জন করা যায় না, যদি আল্লাহর অনুগ্রহ না থাকে।সুতরাং আল্লাহর প্রদত্ত সম্পদে লাগামহীন স্বাধীনতা নেই।যেথায়-সেথায় এই সম্পদ ব্যাবহার করা যাবেনা।যা পুজিঁবাদী মনোভাবের পরিপন্হি।পুজিঁবাদী মনোভাবে এই ধারণা করা হয় যে, সম্পদ তারই প্রচেষ্টার ফসল।এই সম্পদে যাই ইচ্ছা তাই করবে।হারাম কাজেও ব্যাবহার করতে পারবে।পৃথিবীতে সন্ত্রাস তৈরী করতে পারবে।এতে কারো বাঁধা দেয়ার অধিকার নেই।যেমনটি হযরত শুয়াইব আ: এর জাতি বলেছিলেন: أصلاتك تأمرك أن نترك ما يعبد آباؤنا أو أن نفعل في أموالنا ما نشاء
উক্ত আয়াতে শুয়াইব আ: এর জাতি নিজেদের সম্পদে লাগামহীন স্বাধীনতার দাবি করেছিলেন।যা পৃথিবীতে বিবাদ সৃষ্টি হওয়ার অন্যতম কারণ।ইসলামে এ ধরণের স্বাধীনতা দেওয়া হয়নি।বরং উত্তরে বলা হয়েছে: ولله ما في السماوات وما في الأرض
আসমান- যমীনে যা কিছু আছে সব কিছুর আসল মালিক আল্লাহ।সুতরাং তাঁরই নির্দেশানুযায়ী সম্পদের ব্যাবহার করতে হবে।
দুই:
সম্পদের মাধ্যমে আখেরাত তলব করতে গিয়ে দুনিয়াকে একেবারে ভুলে যাবে না।
কুরান ও হাদিসের আলোকে মানব জীবনে অর্থের প্রয়োজনতা অনেক বেশী।তবে অর্থ উপার্জনই যেন জীবনের মৌলিক বিষয় না হয়।ইসলামী অর্থনীতি ও অনৈসলামী অর্থনীতির মাঝে এটাই পার্থক্য।ইসলামী অর্থনীতিতে অর্থ উপার্জন জীবন পরিচালনার উপকরণ মাত্র।এর মৌলিক উদ্দেশ্য আখেরাত অর্জন করা।পক্ষান্তরে অনৈসলামী অর্থনীতিতে অর্থ উপার্জনই জীবনের মূল উদ্দেশ্য।জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সম্পদ উপার্জন করবে আর ভোগ করবে।এই উপার্জনে হালাল হারামের বিবেচনার দরকার নেই।পক্ষান্তরে একজন মুসলিম জায়েয ও হালাল পদ্ধতিতে অর্থ উপার্জন করবে।এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষে আল্লাহর রাস্তায় দান করবে।নিজের জন্য ও কিছু রাখবে।
তিন:
ধনীদের সম্পদে গরীব,মিসকীন ও অসহায়দের অধিকার রয়েছে।
আল্লাহ তা’লা ধনীদেরকে নিজ অনুগ্রহে সম্পদ দান করেছেন।সুতরাং সে ও যেন এই সম্পদ দিয়ে গরীব,মিসকীন ও অসহায়দের অনুগ্রহ করে।এটি ধনীদের সম্পদের উপর গরীবদের অধিকার।
চার:
সম্পদের জোরে পৃথিবীতে বিবাদ সৃষ্টি করা যাবে না।অন্যের হক নষ্ট করা যাবে না।সন্ত্রাসী কাজে সহযোগিতা করা যাবে না।সম্পদ ব্যাবহারে ইসলামের নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে।
সম্পদে উপরোক্ত চারটি নীতিমালা অনুসরণের মাধ্যমে একজন সম্পদশালী ব্যাক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখেরাত লাভ করতে পারে।দাঁড়াতে পারে কিয়ামতের দিন আম্বিয়া, সিদ্দিকীন ও শহীদদের কাতারে।
লেখক: নুরুল আলম
এম.এ.(ইসলামী অর্থনীতি)
মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
মদিনা মুনাওয়ারা
Comments